আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত হওয়ায় দেশটিতে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে।
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসি নিহত হন। একই দুর্ঘটনায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানেরও মৃত্যু হয়।
তাদের সঙ্গে আরও ছিলেন পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রাহমাতি এবং এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম। আজারবাইজানে একটি জলাধার প্রকল্প উদ্বোধনের পর পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন তারা।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে, রোববার তারা যে হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করছিলেন, সেটি বিধ্বস্ত হলে তারা নিহত হন। ৬৩ বছর বয়সী ইব্রাহিম রাইসিকে সর্বোচ্চ নেতার সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আয়াতুল্লাহ খামেনি এ ঘটনায় ইরানের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন ভাইস প্রসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবের। ইরানের মন্ত্রিসভা উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরি কানিকে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গত রোববার (১৯ মে) স্থানীয় সময় বিকেলে দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটি গতকাল সোমবার সকালে শনাক্ত করা হয়। পরে এক সরকারি বিবৃতিতে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ‘আমি আমার প্রিয় ইরানি জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে দেশে পাঁচ দিনের সরকারি শোক ঘোষণা করছি।’
দুর্ঘটনার পর ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন। এরপর সোমবার সকালে একটি ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, হেলিকপ্টারটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপরই উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে ভ্রমণ করছিলেন রাইসি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী শহর জোলফার কাছে বিমানটি বিধস্ত হয়েছে। পরে বলা হয়, এটি উজি গ্রামের কাছে আরও পূর্ব দিকে।
রাইসির সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান, ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নরসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও দেহরক্ষীরা ছিলেন।
দুর্ঘটনার পরপর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছিলেন, যাই হোক না কেন ইরান সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রেসিডেন্ট মারা গেলে ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, খামেনির সম্মতিক্রমে ভাইস ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেবেন। ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
৬৩ বছর বয়সী কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রাইসি এর আগে দেশের বিচার বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাকে খামেনির একজন অনুসারী হিসেবে দেখা হয়। কিছু বিশ্লেষক মনে করতেন, খামেনির মৃত্যু বা অবসর গ্রহণের পরে ৮৫ বছর বয়সী এ নেতার স্থলাভিষিক্ত হতেন রাইসি।