নিজস্ব প্রতিবেদক: গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে এবারও জাতিসংঘে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত দুই বছরও প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ভাষণ দেন।
বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী আসন্ন সফর সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
মোমেন বলেন, ইউএনজিএ’র ফাঁকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য চীনের উপস্থিতিতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিত থাকার সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার নাগরিকদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে বিশ্ব নেতাদের আগ্রহ ধরে রাখতে ইউএনজিএ চলাকালে রোহিঙ্গা সংকট সংক্রান্ত সকল আলোচনায় বাংলাদেশের জন্য সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করা গুরুত্বপূর্ণ।
ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ সেপ্টেম্বর ইউএনজিএ’র সাধারণ বিতর্কে প্রতি বছরের মতো এবারও তার ভাষণ বাংলায় উপস্থাপন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য, অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মিাণে অগ্রগতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী সাফল্য ও নারী ক্ষমতায়নে অগ্রণী ভূমিকার ওপর আলোকপাত করবেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিশ্বশান্তি, নিরাপদ অভিবাসন, জলাবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা ও সামুদ্রিক অর্থনীতি বিষয়ে বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা নিয়েও বক্তব্য রাখবেন বলে জানান ড. মোমেন।
তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের নবগঠিন ‘আবাসিক সমন্বয়ক পদ্ধতি’ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক লাখ মার্কিন ডলার অনুদান ঘোষণা করবেন।।
প্রধানমন্ত্রী ইউএনজিএএ’র ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
মোমেন বলেন, ২৪ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ‘দারিদ্র্য নিরসন, মানসম্মত শিক্ষা, জলবায়ু মোকাবেলা পদক্ষেপ ও সংযুক্তকরণে বহুপক্ষীয় প্রয়াস সুদৃঢ়করণ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যের অধীনে ইউএনজিএ’র উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছবেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ (ইউএইচসি) বিষয়ক একটি দিনব্যাপী সভায় যোগ দেবেন। সেখানে তিনি গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক সাফল্য তুলে ধরবেন।
প্রধানমনস্ত্রী শেখ হাসিনা ইউএইচসি’র পাশাপাশি অনুষ্ঠেয় ‘সমতা, অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন ও সবার জন্য সমৃদ্ধির চালক হিসেবে সবার জন্য স্বাস্থ্য কর্মসূচি’ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে সহ-সভাপতিত্ব করবেন।
মোমেন বলেন, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন(জিএভিআই) টিকাদানে বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ নামে একটি পুরস্কার দিতে আন্তরিক আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
একই দিনে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ হলে ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট ২০১৯ : আ রেস উই ক্যান উইন, আ রেস উই মাস্ট উইন’-এ যোগ দেবেন।এছাড়া তিনি মিয়ানামারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে মুসলিম বিশ্বের করণীয় বিষয়ে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয় আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও যোগ দেবেন। ওই দিনে শেখ হাসিনা ‘লিডারশিপ ম্যাটার্স- রেলিভ্যান্স অব মহাত্মা গান্ধী ইন দ্য কন্টেম্পরারি ওয়ার্ল্ড’ ও ‘অভিযোজন বিষয়ক বৈশ্বিক কমিশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
২৫ সেপ্টেম্বর ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি শীর্ষ সম্মেলন) ওপর উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম ‘লোকালাইজিং দ্য এসডিজিস’-এ প্রধানমন্ত্রী কো-মডারেটরের দায়িত্ব পালন করবেন।
২৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সম্মানে আয়োজিত ইউনিসেসেফের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ অনুষ্ঠানে তিনি ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ শীর্ষক একটি পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার ‘সাইটেইনেবেল ইউনিভার্সেল হেল্থ কভারেজ: কমপ্রেভেনসিভ প্রাইমারি কেয়ার ইনক্লুসিভ অব মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড ডিজেবিলিটিজ’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এখানে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা খাতে বাংলাদেশের সাফল্য এবং অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশের উদ্যোগের কথা তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে প্রেস ব্রিফিং করবেন এবং নিউইয়র্কের হোটেল মারিয়ট মারক্যুইসে বাংলাদেশি কমিউনিটি আয়োজিত একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভয়েজ অব আমেরিকা, ওয়াশিংটন পোস্ট ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ সুপরিচিত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেবেন।
২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ৯টায় বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক থেকে আবুধাবি হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন এবং ১ অক্টোকর সকালে তিনি ঢাকা পৌঁছবেন।