আন্তর্জাতিক ডেস্ক:বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ২০১৫ সালে প্যারিসে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেই ঘোষণা দেন, নির্বাচিত হলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেবেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘকে সেই কথা জানালো তার প্রশাসন।
গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়ে বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিরসনে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার এমন আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় অন্যান্য দেশগুলো নিন্দাপ্রকাশ করে তাদের হতাশার কথা জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য সর্বোচ্চ দায়ী যুক্তরাষ্ট্র, কেননা দেশটি সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে।
চুক্তি থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য সোমবার জাতিসংঘের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে হোয়াইট হাউস। তাতে বলা হচ্ছে, চুক্তি কার্যকরে তাদের অন্তত এক বছর সময় লাগবে। আর এই চিঠি দেয়ার মাধ্যমে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলো।
২০১৫ সালে ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল বিশ্বের ১৮৮টি দেশ। চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আরও ১৮৭টি প্রতিশ্রুতি দেয় যে, বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির নিচে সীমাবদ্ধ রাখবে তারা। এছাড়া তাদের দৃষ্টি থাকবে লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৫ এর সুবিধাগুলো অর্জন।
এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপ নিল যখন বৈশ্বিক উষ্ণতার সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব এড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীরা ও বিশ্বের বহু সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো এই চুক্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য জাতিসংঘ এই চুক্তি নিয়ে আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল।
প্যারিস চুক্তির মতো গোটা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার এমন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার খবরে নিন্দা জানিয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ, পরিবেশবাদী, বিজ্ঞানী ও জলবায়ু আন্দোলনকর্মীরা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণা চুক্তিটিকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যক্রোঁ চীন সফরে যাবেন আগামীকাল বুধবার। বেইজিংয়ে তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ‘প্যারিস চুক্তিকে অপরিবর্তনীয়’ বলে যৌথ বিবৃতি দেবেন বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
এদিকে জাপান সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিদি সুগা যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণাকে চরম হতাশাজনক বলে অভিহিত করে বলেছেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্ঠা চালিয়ে যাবো।’ মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন।
চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর এমন সিদ্ধান্তের যুক্তি দেখিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ‘চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের কাঁধে এক অন্যায্য অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। আমরা এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ পরিবেশবাদী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘যারা এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী তাদের কাঁধে এর বোঝা বেশি থাকাটাই তো স্বাভাবিক।’
বারাক ওবামা প্রশাসন ২০১৫ সালের এই চুক্তিটিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করে ওই সময় তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ ২০০৫ সালের মাত্রা থেকে ২৬-২৮ শতাংশ হ্রাস করা হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে এর কিছুই মানা হবে না।
ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেবেন। আনুষ্ঠানিক এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রক্রিয়া শুরু করলেন। তিনি চুক্তিটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বোঝা হিসেবে দেখেন। তার মতে, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষতিকর।