নিজস্ব প্রতিবেদক: বড় পতনের মধ্য দিয়ে আরও একটি সপ্তাহ পার করেছে শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই বড় পতন হয়েছে। এতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সবকটি মূল্য সূচক ৩ শতাংশের ওপরে কমেছে। আর লেনদেনের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩২ শতাংশ। এই পতনের বাজারে মোটা অঙ্কের বাজার মূলধনও হারিয়েছে ডিএসই।
বড় অঙ্কের বাজার মূলধন হারানোর পাশাপাশি সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭৭টির। আর ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।
এদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৫৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৬০ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক হারাল ২১৭ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বড় পতন হয়েছে অপর দুটি সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৩৯ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ২৬ দশমিক ৩২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের টানা পতনে ইসলামী নীতি ভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত এ সূচকটি কমল ৬ শতাংশের ওপরে।
আর ডিএসই-৩০ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৫৭ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৪১ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ হিসাবে দুই সপ্তাহের টানা পতনে সব থেকে ‘ভালো’ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইর এই সূচকটি কমল ১০০ পয়েন্ট।
সবকটি সূচকের এমন বড় পতনের মধ্যে ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ তিনশ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৬২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৩১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ২ হাজার ৩১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৭৩৭ কোটি টাকা বা ৩১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের মধ্যে ‘এ’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের অবদান দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এছাড়া ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘বি’ গ্রুপের অবদান ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের অবদান ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রুপের অবদান ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ৩৬ কোটি ৬৩ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ড্যাফোডিল কম্পিউটার, ন্যাশনাল টিউবস, জাহিন স্পিনিং এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল।