অনলাইন ডেস্ক : কবি কাজী জহিরুল ইসলামের ৫৩তম জন্মদিন ১০ ফেব্রুয়ারি। ১৯৬৮ সালের এইদিনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খাগাতুয়া গ্রামে, মাতুলালয়ে, জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশব-কৈশোর কাটে পুরনো ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। খুব কম বয়স থেকেই কবিতার ঘোরে আচ্ছন্ন থাকলেও পেশাগত জীবনে তিনি একজন সফল মানুষ। বর্তমানে জাতিসংঘ সদর দফতর, নিউ ইয়র্কে কর্মরত। তিনি প্রতিষ্ঠানটির আয়কর বিভাগের প্রধান।
এ পর্যন্ত তার ৬৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি কবিতার বই। ইউরোপ থেকে প্রকাশিত ‘পোয়েমস অব কাজী জহিরুল ইসলাম–পাওয়ার অব ওয়ার্ডস’ নিউ ইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটিতে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে গৃহীত হয়েছে ২০১৮ সালে।
তিনি বাংলা কবিতা থেকে ক্রিয়াপদ তুলে দিয়ে লিখেছেন নতুন ধরনের কবিতা। ‘ক্রিয়াপদহীন ক্রিয়াকলাপ’ নামে ক্রিয়াপদহীন কবিতার বইটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে, ২০১৯-এ বর্ধিত কলেবরে ঢাকা থেকে বের হয় ‘ক্রিয়াপদহীন কবিতা’। বইটির উড়িয়া অনুবাদ বের হয় ওড়িশার ভূবনেশ্বর থেকে। অনুবাদ করেন উড়িয়া কবি অজিত পাত্র। কোনো বাংলাদেশি কবির এটিই প্রথম উড়িয়া ভাষায় অনূদিত গ্রন্থ।
কবি কাজী জহিরুল ইসলাম কর্তৃক অনূদিত কবিতার বই ‘জালালুদ্দিন রুমির কবিতা’ এবং ‘এজরা পাউন্ডের কবিতা’ ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে, একালে কাকতলাতে বেল, রাস্তাটি ক্রমশ সরু হয়ে যাচ্ছে, সূর্যাস্তের পরের ফিরিস্তি, আকাশের স্ট্রিটে হাঁটে ডিজিটাল নারদ, বালিকাদের চাবিওয়ালা, উটপাখিদের গ্রামে উড়ালসভা, অন্ধকারে জিহ্বা নাড়ে পাপের গহ্বর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
তার রচিত ভ্রমণ গ্রন্থগুলো দুই খণ্ডে ভ্রমণসমগ্র-১ এবং ভ্রমণসমগ্র-২ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭ সালে। আমাদের ভাষা আন্দোলনের সাত ভাষা শহীদকে নিয়ে রচিত তার গল্পগ্রন্থ ‘উত্থানপর্বের গল্প’ একটি জাতীয় সম্পদ। তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল থেকে আজ অবধি কীভাবে সাহিত্যকে আশ্রয় করে আজকের বাংলা ভাষাটি গড়ে উঠেছে তার ধারাবাহিক বর্ণনা লিখেছেন গদ্যগ্রন্থ ‘শেকড়ের খোঁজ’-এ। এছাড়া তার রাজনৈতিক উপন্যাস ‘থাবড়া হামিদ’ ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
কাজী জহিরুল ইসলামের সম্পাদনায় আমাজনে প্রকাশিত হয়েছে বাঙালি কবিদের ইংরেজি কবিতার অ্যান্থলজি ‘আন্ডার দ্য ব্লু রুফ’। ইতিমধ্যেই এর তিনটি ভলিউম বের হয়ে গেছে, যার প্রতিটির কলেবর প্রায় পাঁচশ পৃষ্ঠা। তিন খণ্ডে দুই বাংলার ১০৮জন কবির, প্রত্যেকের ৫ থেকে ১০টি করে কবিতা, সংকলিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন ১০ ভলিউমে তিনি সাড়ে তিনশ বাঙালি কবির প্রায় ৩ হাজার কবিতা প্রকাশ করবেন। এটি বাংলা ভাষা ও কবিতার জন্য এক অসামান্য কাজ।
ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক এক অনুষ্ঠানে তার এই কাজের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি তাকে বিশেষভাবে আমার ভালোবাসা জানাই। কারণ তিনি বাংলা ভাষার কবিতাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।’
২০২০ এর বইমেলায় এসেছে তার ‘কবিতা সমগ্র-৩’, প্রকাশক অগ্রদূত অ্যান্ড কোম্পানি। এছাড়া স্কলার্স পাবলিশার্স এনেছে গদ্য সংকলন ‘ঊত গদ্যবীজ’। তিউড়ি প্রকাশন থেকে এসেছে নতুন কবিতার বই ‘দেয়ালঘড়িটা কী মিথ্যুক’। বর্ণ প্রকাশ থেকে আসছে প্রেমের কবিতা সংকলন ‘প্রেমের কবিতা’। এ বছর শিক্ষামূলক শিশুতোষ গল্পের বই এসেছে একটি, ‘জলের ঘড়ি’, প্রকাশক খণ্ড-ত।
কবি কাজী জহিরুল ইসলাম তার স্ত্রী মুক্তি জহির, পুত্র কাজী আবরার জহির এবং দুই কন্যা জল ও নভোকে নিয়ে নিউ ইয়র্কে বসবাস করছেন।