অনলাইন ডেস্ক: ভাষা সংস্কৃতি রক্ষা এবং তরুণ বাঙালিদের মানস গঠনে বিশেষ অবদান রাখায় ‘বিশ্ব বাঙালি পুরস্কার-২০১৯’ পেলেন বাংলাদেশ ও ভারতের পাঁচ জন কীর্তিমান বাঙালি। তারা হলেন- প্রফেসর এমিরেটস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (বাংলাদেশ), অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় (ভারত), অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (বাংলাদেশ), কবি পার্থ বসু (ভারত) এবং অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য (ভারত)। শিশুদের হাত দিয়ে তুলে দেয়া হয় পদক ও অর্থ।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এ উপলক্ষে বিশ্ব বাঙালি সংঘের (বিবাস) পক্ষ থেকে দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সংঘের আচার্য, কবি, সাংবাদিক রাজু আহমেদ মামুন, সমন্বয়ক মজিব মহম্মদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রফেসর এমিরেটস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, পদক গ্রহণের পর তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘পুরস্কার তো নানা রকমই হয়, অনেক পুরস্কারই পাই কিন্তু বিশ্ব বাঙালি সংঘের এ পুরস্কারে আমি সত্যই সম্মানিত বোধ করছি। আনন্দিত হয়েছি। আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম আজ সেখান থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। শ্রেণি বৈষম্যহীন যে সমাজ চেয়েছিলাম তা পাইনি। এটা অর্জিত না হলে বাঙালির প্রকৃত মঙ্গল হবে না।’
অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় একজন ইতিহাসবিদ ও পঞ্চাশের দশকে হওয়া বিহারের মানভূম-সিংভূম বাংলা ভাষা আন্দোলনের কর্মী। তার পরিবারও এই ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পদক গ্রহণের পর তিনি বলেন, ‘’আমি আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ এই সম্মানের জন্য। এ দেশের মানুষ বাংলা ও বাঙালি জাতিকে যেভাবে ধারণ করে বাঁচিয়ে রেখেছেন তা নিশ্চয়ই শ্রদ্ধা করার মতো।’
বাংলাদেশের ৮০ লাখের অধিক শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল বই পড়া আন্দোলনে যুক্ত করে, উন্নত জাতিগঠন প্রক্রিয়ায় বিশেষ অবদান রাখেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। পদক গ্রহণের পর তিনি বলেন, ‘আমাকে এই পুরস্কারে মনোনীত করায় আমি কিছুটা বিস্মিত, কারণ ইদানীং তো আমার বাঙালিত্ব নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। ধন্যবাদ বিশ্ব বাঙালি সংঘকে। আমি সারা জীবন চেষ্টা করেছি, তরুণদের মননের বিকাশ ঘটাতে বইয়ের মাধ্যমে। কেননা বাঙালি সংখ্যায় একটি বড় জাতি, কিন্তু বড় জাতি আর ছোট মন এক সাথে যায় না। তাই আমাদের চেষ্টা হোক মননের বিকাশ।’
ক্রমশই পশ্চিমবঙ্গে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় গড়ে ওঠা বাংলাপক্ষ আন্দোলনের রূপকার, ভাষাযোদ্ধা, কবি পার্থ বসু। পদক গ্রহণের পর তিনি বলেন, ‘ভারতজুড়ে বাংলা ও বাঙালি আজ বিপন্ন। এই সংকটেও আমরা বাংলাপক্ষ সহ অনেক সংগঠন লড়াই করে যাচ্ছি। বাঙালিদের দেশ বাংলাদেশের মানুষের সহমর্মিতা ভালবাসা আমাদের অনুপ্রেরণা। কারণ দিন শেষে আমরা তো একটি জাতি- বাঙালি। কৃতজ্ঞ বিশ্ব বাঙালি সংঘের প্রতি।’
সম্প্রতি আসামে বিপন্ন বাঙালিদের পক্ষে কলম যোদ্ধা হয়ে সম্মুখ সমরে লড়াই করছেন লেখক অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য। তিনি আসতে না পারলেও চিঠি পাঠিয়েছেন।