আজগর পাঠান: রাজধানী ঘেষা গাজীপুরে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সংবাদকর্মীসহ অন্যরা। সপ্তাহখানেক আগেও সংক্রমণ ছিল অল্পসংখ্যক।
আর আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গাজীপুরে সংক্রমণ হয়েছে ৩১৭ জন।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান জানান, এ পর্যন্ত গাজীপুরে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে ৩১৭ জন। এই সংখ্যা ঢাকা নারায়ণগঞ্জের পর সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলায় ১০৯ জন, কাপাসিয়া উপজেলায় ৭০ জন, কালীগঞ্জে ৮৯ জন, শ্রীপুরে ২০ জন ও কালিয়াকৈরে ২৯ জন।
গাজীপুরে করোনা ভাইরাসটি এ পর্যন্ত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ২ জনের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একশর মতো চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী, ৯১ জন পুলিশ সদস্য ও ২ জন সংবাদকর্মীও আছেন। ১১ এপ্রিল পুরো গাজীপুরে লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু লকডাউন তেমন মানছে না মানুষ। বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দলে দলে মানুষ জড়ো হচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে।
একটু কিছু হলেই সাধারণ মানুষ সড়কে নেমে পড়ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন। আর এতে ক্রমেই গাজীপুরে করোনা আক্রান্ত বেড়ে চলছে।
জেলার কয়েকটি শিল্পকারখানা এখনও বন্ধ হয়নি। আবার অনেকে আতঙ্কে ট্রাক-পিকআপ, অটোরিকশা বা হেঁটে যে যেভাবে পারছে গাজীপুরের ওপর দিয়ে চলাফেরা করছে। এতে দেশের অন্য এলাকায় ভাইরাসটি আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় গত ১৬ মার্চ এক ইতালিপ্রবাসীর শরীরে। ইতালি থেকে ১৪ মার্চ দেশে ফিরে তিনি গাজীপুরের পুবাইলে মেঘডুবি মা ও শিশুকেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। ওই ব্যক্তির বাড়ি নরসিংদীতে। ২৯ মার্চ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বারবৈকা এলাকায় দ্বিতীয় ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। তিনি ইতালিপ্রবাসী আত্মীয়ের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ১০ এপ্রিল ৪ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হলে জেলায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা।
জানা গেছে, গাজীপুরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সংবাদকর্মীও রয়েছেন। তার মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চিকিৎসক আছেন সাতজন। গাজীপুরের তেঁতুইবাড়ি এলাকায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালের আছেন তিন চিকিৎসক এবং কাপাসিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩৫ জন। গাজীপুরের গাছা থানার পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা, এ ছাড়া গাজীপুরের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিক ও তাঁর ছেলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একটি পত্রিকার সাংবাদিক আক্রান্ত হলেও তার স্ত্রী কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স হয়েও আক্রান্ত হয়নি। এরা সকলেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।