এ দেশকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে দেশের নদীগুলোই। আর পদ্মা বাংলাদেশের নদীর মধ্যে সেরাদের সেরা। বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদীও এই পদ্মা। হিমালয়ে উৎপত্তি হয়ে এ নদীটির শেষ গন্তব্য বঙ্গোপসাগরে। তাইতো এ নদী বেশ ক্ষরস্রোতাও।
দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের লালিত স্বপ্ন ছিল প্রমত্তা পদ্মার বুকে একটি সেতু। কোটি কোটি মানুষের সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে দৃশ্যমান। আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। স্বপ্নের পদ্মাসেতুকে নিয়ে চলছে নানা আয়োজন। এ সেতু নিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক গান। সিনেমাও হচ্ছে।
তবে এর আগেও পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে বেশকিছু সাড়া জাগানো সিনেমা নির্মিত হয়েছে। সেসব সিনেমাগুলো নিয়েই আজকের আয়োজন।
পদ্মা নদীর মাঝি
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৯৩ সালে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন গৌতম ঘোষ। পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের পটভূমি বাংলাদেশের বিক্রমপুর-ফরিদপুর অঞ্চল। এই উপন্যাসের দেবীগঞ্জ ও আমিনবাড়ী পদ্মার তীরবর্তী গ্রাম। উপন্যাসে পদ্মার তীর সংলগ্ন কেতুপুর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের পদ্মার মাঝি ও জেলেদের বিশ্বস্ত জীবনালেখ্য চিত্রিত হয়েছে এই সিনেমায়।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষদের নদীভিত্তিক জীবনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত দলিল বলে পরিচিতি ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। ছবিটি বাংলাদেশ ও ভারত দুদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ করা হয়। এতে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, চম্পা, রূপা ব্যানার্জি, উৎপল দত্তসহ নামকরা আরো বেশ কিছু শিল্পীমুখ।
‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ১৯৯৩ সালে কয়েকটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। এগুলো হচ্ছে- সেরা চলচ্চিত্র, সেরা অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, সেরা অভিনেত্রী চম্পা, সেরা মেকআপম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এবং সেরা শিল্প নির্দেশক মহিউদ্দিন ফারুক। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও কয়েকটি শাখায় ছবিটি পুরস্কার অর্জন করে নেয়। সেরা ফিচার ছবি, সেরা পরিচালক বিভাগে ভারতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেয় ছবিটি।
দুর্বার গতি পদ্মা
১৯৪৭-এর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের লড়াই শুরু হয়। সেই কাহিনি বারবার পর্দায় ফিরে এসেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার গল্প ভারতের একজনকে তাড়িত করেছে প্রবলভাবে। যিনি নিজের জীবনকালে কখনো দেশভাগ মানেননি। তিনি বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক। তার কাছে গঙ্গা এবং পদ্মা যে একই আত্মার দুই নাম! কিন্তু বাস্তবকে যে মেনে নিতেই হয়। সেই যুদ্ধেরই একটি ছোট্ট অংশ, সেই সময়ের ওপার বাংলার চিত্র তিনি তুলে ধরেছিলেন ক্যামেরায়। তৈরি করেছিলেন একটি বিশেষ তথ্যচিত্র ‘দুর্বার গতি পদ্মা’।
এক মুক্তিযোদ্ধার জবানিতে বলা টুকরো টুকরো নানা তথ্য, ঘটনা, প্রতীক এর সমন্বয়। পদ্মা, দাঁড়িপাল্লা, নৌকা, লাল পর্দা প্রভৃতি প্রতীক বা আঁকা ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের জটিল বাস্তবকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশে এটি প্রদর্শিত হয়।
বিদ্রোহী পদ্মা
আশকার ইবনে শাইখের উপন্যাস অবলম্বনে ২০০৬ সালে বাদল খন্দকার নির্মাণ করেন ‘বিদ্রোহী পদ্মা’। পদ্মা নদীর চর নিয়ে শোষক ও শোষিতের লড়াইয়ের আখ্যান ‘বিদ্রোহী পদ্মা’। দখলদার জমিদার তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যায় করতে পিছপা হয় না। জমিদারের চর দখল, নারীর প্রতি অত্যাচারের প্রতিবাদ করে তারই লাঠিয়াল রহমত (কাঞ্চন)। তার সঙ্গে একাত্ম হয় গ্রামের স্কুলশিক্ষক রকিবুল (শামস সুমন) ও গায়েন রাজু (রিয়াজ)। তারা ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষদের প্রতিবাদের ভাষা শেখায়। তারা প্রতিবাদী, একদিন জোটবদ্ধ হয়ে শোষক ও অত্যাচারী জমিদারের ওপর আঘাত হানে। এমন গল্পেই নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।
এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন- ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা, রিয়াজ, পপি, শামস সুমন, শহীদুল আলম সাচ্চুসহ অনেকে।
পদ্মাপুরাণ
পদ্মার সঙ্গে পুরাণ যোগ করে পরিচালক রাশিদ পলাশ নির্মাণ করেছেন সিনেমা ‘পদ্মাপুরাণ’। পদ্মার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে শুরু করেছে নদী পাড়ের মানুষের জীবন। এই বদলগুলোই ‘পদ্মাপুরাণ’ সিনেমায় তুলে ধরা হয়।
পদ্মাপুরাণ সিনেমায় অভিনয় করেছেন- সাদিয়া মাহি, প্রসূন আজাদ, শম্পা রেজা, জয়রাজ, সুমিত সেনগুপ্ত, কায়েস চৌধুরী, সূচনা শিকদার, রেশমী, হেদায়েত নান্নু, আশরাফুল আশিষ, সাদিয়া তানজিন প্রমুখ।
পদ্মার বুকে স্বপ্নের সেতু
পদ্মাসেতু আমাদের গর্বের সম্পদ, অহঙ্কারের নিদর্শন। এই সেতু আমাদের মর্যাদার প্রতীক, আত্মসম্মানের প্রতীক, কারো কাছে মাথা নত না করে মাথা উঁচু করার প্রতীক, সক্ষমতার প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক এবং সর্বোপরি আমরা পারি তা প্রমাণের প্রতীক।
‘পদ্মার বুকে স্বপ্নের সেতু’ সিনেমায় এসব কিছু উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা আলী আজাদ। নির্মাণের পাশাপাশি এর কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্যের কাজ করেছেন আলী আজাদ। চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাঞ্জু জন ও অলিভিয়া মাইশা। এছাড়াও রয়েছেন- রায়হান মুজিব, হিমেল রাজ, খুকু, আনোয়ার সিরাজী, শান্তা পাল প্রমুখ। ইতোমধ্যে সিনেমাটির শুটিং শেষ হয়েছে। চলছে সম্পাদনার কাজ। জানা গেছে, শিগগিরই সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হবে।