একসময় শীর্ষ সন্ত্রাসী ফজল হকের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন কামরুল হাসান টিটু। তখন থেকে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। খুন, ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে রয়েছে ১৭টি মামলা। সাত বছর আগে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক পা হারানোর পর থেকেই কাজ শুরু করেন ডাকাত ও ভাড়াটে খুনি চক্রের সংগঠক হিসেবে। অন্যদিকে, নুরুল আবছার ও গিয়াস উদ্দিন বাবলু ওরফে সাদ্দামও ডাকাতির পাশাপাশি ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করেন।
চট্টগ্রামের রাউজানের এ তিন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে এমনই তথ্য। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক একে ২২ রাইফেল ও ইতালির পিস্তলসহ বিপুলসংখ্যক অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
একই দিন দুপুরে নগরের ষোলশহরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযান ও গ্রেফতারদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন জেলা পুলিশের এসপি এসএম রাশিদুল হক।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতভর রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী কামরুল হাসান টিটুসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দুটি অত্যাধুনিক একে ২২ রাইফেল, ইতালির তৈরি একটি সাত দশমিক ৬৫ পিস্তল, একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, একটি একনলা বন্দুক, একটি এলজি ও বেশকিছু বুলেট উদ্ধার করা হয়। কামরুল হাসান টিটু তাদের মাস্টারমাইন্ড। তার বাড়ি থেকেই বেশিরভাগ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এসপি আরো বলেন, কামরুল হাসান টিটুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তারা অস্ত্রগুলো দিয়ে বিভিন্ন সময় ডাকাতি করতেন। ডাকাতির পাশাপাশি আর কী উদ্দেশ্য ছিল তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান একসময় সন্ত্রাসকবলিত এলাকা ছিল। বর্তমানে শান্তি এসেছে এলাকায়। এসব এলাকায় যারা ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা বিভিন্ন সময়ে জেলে ছিলেন। জামিন পেয়েছেন কিছু, আবার কিছু জেলে রয়েছেন। অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন কিছু ব্যক্তি এখনো রয়ে গেছেন। গ্রেফতারদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র পাওয়া গেছে। আরো অনেকের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বলা যাবে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এসপি বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে কামরুল হাসান টিটুর একটি কানেকশন রয়েছে। আরেকজন ব্যক্তি দুবাই থাকেন, তিনিও তাদের বিভিন্ন বিষয়ে ইন্ধন দিচ্ছেন। সন্ত্রাসকবলিত যে জনপদ এখন একটি শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছে সেই শান্তির জনপদকে আবারো উত্তপ্ত করার একটি প্রচেষ্টা চলছে বলে আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
কামরুল হাসান টিটু একই উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পলোয়ান পাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। এছাড়া নুরুল আবছার একই ইউনিয়নের গোলাম হোসেনের ও গিয়াস উদ্দিন বাবলু ওরফে সাদ্দাম হাটহাজারী উপজেলার কুয়াইশ বাদামতল এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে।