সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে ধর্মের অপব্যবহারীদের জবাব দেওয়ার জন্য সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে ধর্মের অপব্যবহাকারী দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করতে হবে। পাকিস্তান আমলে ধর্ম গেল গেল বলে ২৩ বছর যে ধুয়া তুলেছিল সরকারবিরোধী পাকিস্তানপ্রেমী মৌলবাদীরা, সে গোষ্ঠীর একটি অংশ এখনো সক্রিয় আছে। তাদের জবাব দেওয়ার অন্যতম মোক্ষম হাতিয়ার হতে পারে সার্কাস, নাটক, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।
সরকারি অনুদানে নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য লক্ষণ দাস সার্কাস’—এর প্রিমিয়ার শো উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদও বক্তব্য রাখেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, চিত্তবিনোদনের জন্য খুব জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল সার্কাস। আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে আমি চতুর্থ শ্রেণিতে থাকাকালে প্রথম সার্কাস দেখি। তারপর প্রতিবছর নিয়মিত সার্কাস দেখতাম। তখন গাজীপুরে রথযাত্রা উপলক্ষে নিয়মিত সার্কাস প্রদর্শন করা হতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সে সার্কাস আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, চলচ্চিত্র যদিও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন, তথাপি সংস্কৃতির উপাদান হিসাবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান দেওয়া শুরু করেছে। অনুদানের পরিমাণও তুলনামূলক বেশি। ইতোমধ্যে জাতির পিতার বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে নিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুদানে প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের ছোটবেলায় কমলা সার্কাসের খুব নামডাক ছিল। সার্কাস শিল্পীদের বিভিন্ন ধরনের কসরত, তারের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, হাতি, বাঘ দেখে খুব আনন্দ উপভোগ করতাম। পরে মৌলবাদীদের উৎপাতে সার্কাস অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। সার্কাস নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটি হতে পারে এ শিল্পকে পুনরুজ্জীবনের একটি প্রধান অস্ত্র। মহান সার্কাসশিল্পী লক্ষণ দাসের জীবনকাহিনী নিয়ে মূলত প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে। লক্ষণ দাস মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শুধু তাকেই হত্যা করেনি, বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে তার আদরের হাতিটাকেও।
খ্যাতিমান নাট্যজন অনন্ত হীরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মানজারে হাসীন মুরাদ, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহিন ইসলাম, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. নিজামুল কবীর, সূর্য দীঘল বাড়ি চলচ্চিত্রের নির্মাতা মসিহ উদ্দিন শাকের ও দ্য লক্ষণ দাস সার্কাস প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও পরিচালক ঝুমুর আসমা জুঁই। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী।