জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের বাড়িতে কথিত ডাকাতির ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীদের ফাঁসানোর জন্য শাহিনা বেগম সাজানো ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। আর এ ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। মামলার মূল রহস্যে উদঘাটনে বাদীসহ ডাকাতির সময় উপস্থিত সকলকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি করেছে স্থানীয়রা।
তারা বলেন, প্রতিপক্ষকে থামাতে এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
মামলার কারণে বকশীগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখন ঘরছাড়া।
এদিকে, এখনও খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশসহ ডিবি, সিআইডি, ডিএসবি, ডিজিএফআই, এনএসআই একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নামলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। সাজানো এই ডাকাতির ঘটনায় পুলিশসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগও বেশ বিব্রত।
পুলিশের পক্ষ থেকেও তথ্য জানাতেও অপরগতা প্রকাশ করা হয়।
স্থানীয়রা এই মামলাটিকে সাজানো ও হয়রানিমূলক দাবি করে দ্রুত প্রত্যাহার চান। মামলার মূল রহস্যা উদঘাটনে মামলার বাদী আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম ও ডাকাতির সময় উপস্থিত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জোর দাবি জানান।
মামলায় ৭৭ ভরি স্বার্ণালঙ্কার ও নগদ ২১ লাখ টাকার আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
যদিও মামলায় উক্ত ২১ লাখ টাকা ধান বিক্রির কথা উল্লেখ রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রায় সময়ই ঢাকায় অবস্থান করেন। ঢাকা থেকে বাড়িতে অরক্ষিত অবস্থায় এসব স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে সন্দেহ করে স্বর্ণ কেনার রশিদ ও সঠিকভাবে আয়কর দিয়েছে কিনা এর প্রশ্ন তোলেন।
২১ লাখ টাকার ধান বিক্রি করে বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ২ হাজার মন ধানের প্রয়োজন। এতো ধান কোথায় রেখেছিল বা এসব ধান কোথায় উৎপাদন করেছিল তারও প্রশ্ন তোলেন।
২ হাজার মন ধান উৎপাদন করতে কমপক্ষ ১৫০ একর জমির পরিমাণ হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তাদের এতো পরিমাণ জমিও শাহিনা বা তার পরিবারের কারওই নাই।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জামালপুর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর উপ-পরিদর্শক জোবাইদুল ইসলাম জানান, বকশীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুমান তালুকদারসহ এ মামলায় ১৫ জনকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, ডাকাতি মামলায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। দ্রুত এই মিথ্যা ও সাজানো মামলা প্রত্যাহার চান দলটির একটি অংশ। মামলা প্রত্যাহার ও আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনও করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, মামলাটি সাজানো ও ভিত্তিহীন। ১২০ ভরি সোনা ও ২১ লাখ টাকা বাড়িতে রাখার অভিযোগও ভুয়া।
এদিকে, এ ঘটনায় বকশীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভাইস চেয়ারম্যান জুমান তালুকদারকে আটকের পর আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের একটি অংশ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু জাফর জানান, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এই ডাকাতি ঘটনা সাজানো হয়েছে। প্রতিনিয়তই প্রতিপক্ষ নেতাকর্মীদের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান লাল জানান, ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে একটি মহলের ইশরায় প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে বকশীগঞ্জের জনপ্রিয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে আটক করা হয়েছে। তিনি সত্য উদঘাটনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমসহ ডাকাতির সময় উপস্থিত বাড়ির লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরের দিন বকশীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় ৭৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ২১ লাখ টাকা খোয়া যায় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। তবে প্রথম দিকে ১২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ২০ লাখ প্রচার করা হলেও শেষ পর্যন্ত মামলায় ৭৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ২১ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়।