ছয় মাসের শিশু তানজিম। তার নিতম্বে ছোট একটি সুঁই ঢুকে। এক্সরে করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সেই পরামর্শ অনুসারে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় তাকে। অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার ১০ মিনিট আগেও মা-বাবার সঙ্গে খেলা করছিল তানজিম। হাসিখুশি তানজিমের সেই ভিডিওটি মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করেন স্বজনরা। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার থেকে তানজিমের নিথর দেহ বের করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল নগরীর বান্দ রোডের রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে। মৃত শিশু তানজিম পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাউকা গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে।
শিশুর মামা রাকিব জানান, ভাগ্নে তানজিমের নিতম্বে ছোট একটি সুঁই ঢুকে। গলাচিপায় এক্সরে করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পটুয়াখালীতে আসেন। সেখানে চিকিৎসক বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের কাছে গিয়ে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।
তিনি আরো জানান, গত সোমবার গলাচিপা থেকে তারা প্রথমে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) এ আসেন। সেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার ভয়ে চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে তারা নগরীর আগরপুর রোডের মিডটাউন হাসপাতালে ভর্তি হয়।
ডা. তৌহিদুল ইসলাম তাদের জানান, মিডটাউনে অস্ত্রোপচারের ভালো ব্যবস্থা নেই। রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে সেখানে পাঠিয়েছেন। ডা. তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে মঙ্গলবার সকালে অপারেশন করতে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়। অস্ত্রোপচার কক্ষে নেয়ার আগেই ভাগ্নে খেলা করেছে। বরিশালে কয়েকবার এক্সরে করে সুঁইয়ের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়েই এই অস্ত্রোপচারের সিদ্বান্ত নেন চিকিৎসক।
রাকিব অভিযোগ করে বলেন, আমি ভেতরে ছিলাম। অস্ত্রোপচারের জন্য তানজিমের শরীরে ৭-৮ বার সুঁই ফুটানো হয়। পরে কোমরে ইনজেকশন দেয়। এর পর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
রাকিব বলেন, ডা. তৌহিদুল ইসলাম মেশিনে অস্ত্রোপচার করার কথা বলে হাতে করেছেন। অজ্ঞান শিশুকে কোনো অক্সিজেন দেননি। কাটা স্থান সেলাই করেননি। তাদের বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কয়েকজন ওটি রুমে হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত ছিলেন। পরে নিচে আমার পরিচিত ফার্মেসির একজনকে নিয়ে ফিরে এলে তাকে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কিছুক্ষণ পরেই আমি ভেতরে বোনের চিৎকার শুনতে পাই। ওরা আমার ভাগ্নেকে মেরে ফেলেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশুর অস্ত্রোপচার করেছেন ডা. তৌহিদুল ইসলাম। তাকে অজ্ঞান করেছে ডা. মনিরুল ইসলাম।
চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অনাকাঙিক্ষত ও হৃদয়বিদারক। ছয় মাস বয়সী একটি শিশুকে অজ্ঞান করা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু শিশুটির জরুরি অস্ত্রোপচারও প্রয়োজন। তাই ঝুঁকি নিতে হয়েছে। এ জন্য আমার ১৬ বছরের চিকিৎসা পেশায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু অস্ত্রোপচারের শেষ মুহূর্তে এসে শিশুর হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। এখানে আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না।
বরিশাল মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ফজলুল হক বলেন, শিশুটি কেন মারা গেলো তা জনতে তদন্ত করা হচ্ছে।