মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

ব্যাংক থেকে টাকা তুললেও বিপদ!

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩
  • ৭১ বার পঠিত

ব্যাংক থেকে টাকা তুলেও নিরাপদ নন গ্রাহক! যে কোনো মুহূর্তেই পড়তে পারেন বিপদে। র‌্যাব-পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিলেন প্রাইভেট কারে। পরে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে টাকাগুলো নিয়ে নামিয়ে দিলেন কোনো মহাসড়কে!

মাদারীপুরের রাজৈরে এভাবে বার বার গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা খোয়া গেলেও দুর্বৃত্তরা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সময় সংবাদের অনুসন্ধানে জানা যায়, আরাফাত হোসেন নবিন নামে এক যুবক রাজৈরের ইবিশপুরে এজেন্ট ব্যাংক পরিচালনা করেন। তার প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার আল মুমিন মোল্লা সম্প্রতি টেকেরহাটের মেঘনা ব্যাংক থেকে ১২ লাখ টাকা তুলে রওয়ানা দেন গন্তব্যে। দুর্বৃত্তরা মাঝপথে ডিবি পরিচয়ে তাকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যান। পরে ২৫ কিলোমিটার ঘুরিয়ে দূরে এক মহাসড়কের কোনো এক স্থানে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যান।

একই ভাবে এ চক্রের শিকার হন কবিরাজপুরের কেরামত আলী শিকদার ও নারায়ণপুরের গিয়াস শেখ। তাদের মতো অনেকেই আতঙ্ক নিয়ে যান টেকেরহাট বন্দরের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে।

অভিযোগ রয়েছে, বার বার একই স্টাইলে গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা খোয়া গেলেও উদ্ধারে তেমন কোনো তৎপরতা নেই পুলিশের। ব্যাংক কর্মকর্তাদের দাবি, অত্যন্ত শক্তিশালী নেটওয়ার্কের কারণে মুহূর্তেই বেশি টাকা উত্তোলনের খবর পেয়ে যায় চক্রটি। আর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ব্যবহার করে সটকে পড়েন দুর্বৃত্তরা।

ভুক্তভোগী আরাফাত হোসেন নবিন বলেন, ‘চলতি মাসের ১৩ আগস্ট ১২ লাখ টাকা খোয়া গেলেও পুলিশের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি না। বেশ কয়েকবার থানায় গেছি। দুর্বৃত্তদের ধরার ব্যাপারে তৎপরতা নেই, আর টাকা উদ্ধারেও দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই পুলিশের।’

আরেক ভুক্তভোগী কেরামত আলী শেখ বলেন, ‘আমার কবিরাজপুর ও কালামৃধা এ দুই জায়গায় আলাদা দুটি এজেন্ট ব্যাংক রয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা বহন করতে হয়। আমার প্রতিষ্ঠানের ক্যাশিয়ার আবু মো. সাইম গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ‘আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড’ টেকেরহাট শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে আসার সময় এ চক্রের হাদে পড়েন। র‌্যাব পরিচয়ে তাকে প্রাইভেট কারে তোলে একটি চক্র। পরে অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে টাকা রেখে তাকে সড়কের মধ্যেই ফেলে পালিয়ে যায়। এখনো উদ্ধার হয়নি খোয়া যাওয়া সে টাকা।’

গ্রাহক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা তুললেই এমন দুর্বৃত্তদের কবলে পড়তে হচ্ছে। এমন ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটছে। প্রতিনিয়ত ভয় হয়, আমরা নিরাপত্তা চাই। যাতে কোনো ধরনের বিপদ না হয়।’

অহিদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিনিয়ত পুলিশি টহল জোরদার করতে হবে, যাতে অপরাধীরা আতঙ্কে থাকেন। এছাড়া তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা উচিত; তা না হলে এমন কর্মকাণ্ড হতেই থাকবে।’

‘আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেডের’ টেকেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. ছামাদ বিশ্বাস বলেন, ‘টেকেরহাট বন্দরে ১৫টি ব্যাংকে প্রতিদিন ৫০-৬০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। গত দুবছরে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে টেকেরহাট বন্দর ও আশপাশে। এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত বড় ধরনের টাকা উত্তোলনের খবর ব্যাংক থেকে বাহিরে চলে যায়, গ্রাহক বেশে ব্যাংকে প্রতিনিয়ত ঘোরাফেরা করছে চক্রটি। আমরাও এর প্রতিকার চাই।’

মেঘনা ব্যাংক টেকেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরাও অবাক হই। টাকা লেনদেনের খবর কীভাবে প্রতারক চক্র পায়! মূলত এ চক্রটি দীর্ঘসময় একজন গ্রাহককে নজরদারিতে রাখে। এ চক্রটিতে অসংখ্য লোক কাজ করে। সম্প্রতি টাকা খোয়া যাবার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম খান জানান, ‘এভাবে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় চক্রটির বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে, তাদের ধরতে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। গ্রাহক টাকা উত্তোলনের পর ঝুঁকি মনে করলে পুলিশের সহায়তা নিতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রাহকের টাকা গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com