বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

উত্তরাতে বায়ু দূষণ: ঝুঁকিতে মানব প্রজনন ও শিশু

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪
  • ৫০ বার পঠিত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তরিক শিবলীঃ ভৌগোলিক কারণে প্রতিবছর শীতের সময় উত্তরার বায়ুদূষণ বাড়লেও এবার শীত শুরুর বেশ আগে থেকেই উত্তরায় বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং দূষণের দিক থেকে প্রায়ই প্রথম হচ্ছে এবং যা এখনো চলমান ।বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের সূচকে গত দুই মাসে উত্তরা একাধিকবার ৩০০’র বেশি একিউআই স্কোর নিয়ে সর্বোচ্চ দূষিতের তালিকায় নাম লিখিয়েছে, অথচ কোনো স্থানের একিউআই স্কোর যদি ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হওয়ার কথা। এমনকি, এই একিউআই স্কোর যদি পর পর তিন ঘণ্টা ৩০০’র বেশি থাকে, তবে সেখান স্বাস্থ্যগত জরুরী অবস্থাও ঘোষণা করা হয়।
এই অতিরিক্ত বায়ু দূষণের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা ওপর।বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর জরীপে এই তথ্য পাওয়া গেছে।যেখানে বায়ুতে অতি ক্ষুদ্রকণার মাত্রা বাংলাদেশের আদর্শ মান প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রামের চাইতে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি।এই অতি ক্ষুদ্রকণা বলতে ২.৫ মাইক্রন বা তার কম আকারের বস্তুকণার কথা বলা হচ্ছে।একটি চুলের সাথে তুলনা করলে এসব ধূলিকণার আকার চুলের প্রায় ২০ ভাগের এক ভাগের সমান। যা সহজেই মানবদেহে প্রবেশ করে নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে।
বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে- তার অধিকাংশই বায়ু দূষণজনিত। গবেষণা বলছে সাম্প্রতিককালে বায়ু দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেখানে বসবাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রজনন স্বাস্থ্য। বিশেষ করে গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি, শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বায়ু দূষণ বড় ধরণের প্রভাব ফেলে বলে জানান চিকিৎসক নিজামুল হক ।
তিনি বলেন, “বায়ু দূষণ, সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণের এক ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর। এতে পুরুষের শুক্রাণু তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটছে, শুক্রাণুর মান কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে মেয়েদের ডিম্বাণু কল্পনাতীতভাবে কমে গিয়েছে। আবার যেসব ডিম্বাণু রয়েছে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
“এসব দুর্বল বা নষ্ট ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর যখন নিষেক ঘটে এতে যে ভ্রূণ তৈরি হয় সেটা গর্ভে জায়গা করতে পারে না, আবার জায়গা করতে পারলেও বাঁচে না, গর্ভপাত হয়ে যায়। আর এই সমস্যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বর্তাতে পারে। ”
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে বায়ুদূষণ সময়ের আগে কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুদের ব্যাপক ক্ষতি করে। শিশুর মধ্যে অস্থিরতা, ঘুম কম হওয়া, খিটখিটে স্বভাব ও শিশুর বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্তেও বায়ুদূষণ বিশেষভাবে দায়ী। বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসের ক্যানসার, দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা, হৃদ্‌যন্ত্র, চোখ, ত্বক, কিডনি ও প্রজননক্ষমতা ব্যাহত হয়।

“এ বছরের নভেম্বর থেকে দেখা যাচ্ছে যে প্রতি ৬ দিনের মাঝে যেকোনো একদিন দিনের কোনো না কোনো সময়ে উত্তরা দূষিত নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে এবং তার বায়ুর মান সূচক ৩০০ এর উপরে থাকছে”, বলেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা গত ১০ বছরের চেয়ে গড়ে এই বছরে ১০ ভাগেরও বেশি বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে যা একটা বড় শঙ্কার বিষয়।আগের কয়েকটি বছরের ধরন অনুযায়ী, বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বায়ুর মান এতটাই খারাপ থাকে যে এই পাঁচ মাসে সারা বছরের প্রায় ৬৫ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়ে থাকে।আগের সব রেকর্ডকে ভেঙ্গে বারবার দূষণের তালিকায় বারবার উত্তরা চলে আসার পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।রাজধানী উত্তরাতে সারাবছরই ছোট-বড় অজস্র ভবন নির্মাণ এবং রাস্তা মেরামতের কাজ চলে। এর পাশাপাশি গত কয়েকবছরে যোগ হয়েছে মেট্রো-রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্প।যেকোনো ধরনের নির্মাণ কাজ করার সময় বায়ু দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে সেসব নিয়ম তোয়াক্কা করেন না , রাস্তা ও ভবন নির্মাণ বা মেরামতের সময় ধুলাবালি বাতাসের সঙ্গে যেন মিশে না যায়, সেজন্য নির্মাণ স্থানে যথাযথ অস্থায়ী ছাউনি বা বেষ্টনী দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেইসাথে, বেষ্টনীর ভেতর ও বাইরে নির্মাণ সামগ্রী (মাটি, বালি, রড, সিমেন্ট,ইট ইত্যাদি) যথাযথভাবে ঢেকে রাখা এবং দিনে কমপক্ষে দুইবার স্প্রে করে পানি ছিটানোর কথা বলা আছে, এছাড়া নির্মাণাধীন রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করা এবং নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে পরিবহন করার কথাও বলে অধিদপ্তর।ভবন ও রাস্তাঘাট নির্মাণের ক্ষেত্রে যদি কেউ এইসব নিয়ম পালন না করে, সেক্ষেত্রে ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি জরিমানা আরোপ করতে পারবে সিটি কর্পোরেশন।পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব নিয়ম কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।উত্তরা, খিলখে্‌ত আব্দুল্লাপুর, উত্তর খান, দক্ষিণ খান সহ পুরো উত্তরা জুড়ে এই নিয়মের কোন চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যায়নি। উত্তরা কেন্দ্রিক অনেকগুলো মেগা-প্রজেক্ট আছে। সেগুলোতে যখন পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ প্রতিবেদনটি অনুমোদন দেয়া হয় এবং ছাড়পত্র দেয়া হয়, তখন সেখানে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু দিক-নির্দেশনা থাকে। কিন্তু ওগুলো প্রতিপালিত না হলে সাইটে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়ার মতো সাহস পরিবেশ অধিদপ্তর দেখায় না । নিয়ম না মেনে রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচেতন নাগরিকদের মতে এগুলো হলো সর্বোচ্চ রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট প্রকল্প। সুতরাং, এগুলোর ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না।
মানবাধিকার আইন সালিশ ও পরিবেশ রক্ষা ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ এনামুল হক নিপু বলেন, আপনি রাস্তা বানাতে গিয়ে যদি মানুষকে ফুসফুসের ক্যান্সার দিয়ে দেন, তাহলে তো সে মরেই যাবে। রাস্তায় চলাচল করবে কখন?” পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, এমনকি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কেউ আইনকে কার্যকর করার ব্যাপারে নজর দিচ্ছে না।ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) দু’টো স্প্রে ক্যানন এবং দশটি গা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com