একটি সেতুর অভাবে বছরের পর বছর চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুর্গম পাহাড়ের কৃষিনির্ভর ৬ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বুকভেদ করে প্রবাহমান ধলিয়া খাল ৬টি গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে উপজেলা ও পৌর সদর থেকে। খালের ওপর নির্মিত কাঠের তৈরি জরাজীর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি কয়েক বছর পারাপার হলেও চলতি বছরে সেতুটি ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ৬ গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, শুষ্ক মৌসমে খালে পানি কম থাকায় নিচ দিয়ে চলাচল করে মানুষ। বর্ষা মৌসমে খালের পানি বেড়ে গেলে মানুষের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। সেতু ছাড়া পারাপারের বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বর্ষা মৌসুমে পড়ালেখা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল বা বাজারে আসতে হলে দুর্গম পাহাড়ি কাঁচা রাস্তা দিয়ে ৫-৬ কিলোমিটার ঘুরে হেঁটে আসতে হয়। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য চরম ঝুঁকি হয়ে পড়েছে সেতুটি।
খাগড়াছড়ির ৩টি পৌরসভার মধ্যে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ মাটিরাঙ্গা পৌরসভাটি ২০১৬ সালে ২ শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। এতে ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি মোহাম্মদপুর ও বর্জলাসহ দুর্গম পাহাড়ি জনপদের একমাত্র কৃষিনির্ভর ৬টি গ্রামের বাসিন্দাদের।
একদিকে, উঁচু-নিচু পাহাড়ি কাঁচা রাস্তা বর্ষায় চলাচলে অসুবিধা। অপরদিকে, ধলিয়া খালের পানি বাড়লে হাট-বাজার, স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পচে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যহত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ছবুর হোসেন বলেন, গত অর্ধশত বছরে একাধিক জনপ্রতিনিধিরা গ্রামবাসীদের সেতু করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। কয়েক বছর আগে কাঠের তৈরি জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করলেও এ বছর তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
মাটিরাঙ্গা কলেজের অফিস সহায়ক বিমল চাকমা বলেন, যুগ যুগ ধরে অযত্নে পড়ে থাকা সড়কটিতে বিন্দুমাত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে মোহাম্মদপুর, বর্জলা, চোখপাড়া, মহাজনপাড়াসহ ৬ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। দীর্ঘদিন সেতুর অভাবে এখানকার শিক্ষার্থীরাও চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জামাল উদ্দিন মজুমদার সবুজ বলেন, বিপদ-আপদে বর্ষা মৌসুমে খালের ওপার আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় যাওয়া যায় না। এ বড় বেদনাদায়ক ঘটনা। আমি জরুরি ভিত্তিতে খালের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।
মাটিরাঙ্গা পৌরমেয়র শামসুল হক জানান, এরইমধ্যে স্থানীয় এমপির ডিইউ লেটারসহ (এলজিইডি)’র হেড অফিসে আবেদন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্রিজটির কাজ সম্পন্ন করার জন্য এলজিইডি’র প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্রিজটির কারণে এ এলাকার মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডে প্রকল্প পাঠিয়েছি এবং এলজিইডিকে দেওয়া হয়েছে। তারা যদি প্রকল্পটি হাতে নেন, তাহলে মানুষের কষ্ট কমবে।