মাসুদ পারভেজ: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত উত্তরা ৪ নং সেক্টর সী- সেল টাওয়ারের ৬ তলার হলরুমে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম-এর শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সেক্রেটারী জেনারেল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী,
সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও আমীর,ঢাকা মহানগর উত্তর এর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। এ সময় শহীদ হাফেজ জসিম উদ্দীনের বোন তার পরিবারের সুখ দুঃখ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান,নিহতের স্রী, ১ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের পরিবারে উপার্জন করার মতো আর কেউ নেই, তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল। শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর বাবা আব্দুল করিম বলেন, তার ছেলেকে যারা বিনা অপরাধে হত্যা করেছে তিনি তাদের বিচার দাবি করেন। শহীদ আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ( ১৭) এর মা বলেন ৫ তারিখ তার ছেলের সাথে ৫ সেকেন্ড মোবাইলে কথা হয়, তার কিছু সময় পর ছেলে শহীদ হওয়ার খবর পায়। এসয়য় তিনি তার ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।শহীদ জাকারিয়া হাসানের স্রী ও তার স্বামী হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।শহীদ আব্দুর নুর এর পিতা তার সন্তান হত্যার বিচার চেয়েছেন। শহীদ মাইমা সুলতানার মা সকলকে সালাম দিয়ে বলেন, মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তার শিশু সন্তানের কি দোষ ছিলো? বাসায় কেন সে নিরাপদে থাকতে পারে নি, তিনি আরো জানান, মাথায় গুলি লাগার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার সন্তান মারা যায়।শহীদ আকাশের মেয়ে শারমিন বলেন তার পিতার শরীরে ৩ টা গুলি লেগেছে। তার পিতাকে শহীদ হওয়ার ৫ দিন পরে ঢাকা মেডিকেলে পাওয়া যায়। সংসারে তারা ৩ ভাই বোন। শহীদ তাজুল ইসলামের ছেলে সিয়াম বলে তার পিতা রোজা রাখা অবস্থায় ১৮ই সেপ্টেম্বর ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যায়। এছাড়াও শহীদ আসাদ উল্লাহ স্রী,শহীদ রানা তালুকদারের মা, শহীদ শুদা ব্যাপারীর স্রী, তাদের স্বামী ও সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেন।
এসময় তারা আবেগ আপ্লূত হয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্তব্ধ হয়ে উঠে পুরো হলরুম। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে সেখানকার পরিবেশ। এসময় উপস্থিত ওমান প্রবাসী ব্যবসায়ী নেতা ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দগণ শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তারা আরো বলেন, যে স্বৈরাচার সরকারের সময় ঘরে বসে কথা বলা যেতো না, বাংলাদেশের মানুষ রাস্তা ঘাটের পাশাপাশি বাসায় ও নিরাপদ ছিলো না, তাদেরকে উৎখাত করতে যারা জীবন দিয়েছে, আল্লাহপাক যেন তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়।এসময় অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে,এখন আমাদরকে কোরআনের সমাজ গঠন করতে হবে। এ সমাজ গঠনে সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, আমরা অনেক কেঁদেছি, আমরা আর কাঁদবোনা। আমাদের আজকের এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিন বলেন, আন্দোলনের দীর্ঘ সময় উত্তরার জনগণ অনিরাপদ জীবন যাপন করেছে। প্রতি মূহুর্তে অগনিত গুলির মুহু মুহু শব্দে সে সময় উত্তরা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছিলো। আজকে ২৫ জন শহীদ পরিবারের সদস্য এখানে এসেছে। যারা বাংলাদেশের গণ মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছে তাদের পরিবারের পাশে আামাদের সকলকে দাঁড়াতে হবে। সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশে সেলিম উদ্দিন বলেন, শহীদ ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আপনাদেরকে লিখতে হবে। তিনি আরো বলেন স্বৈরশাসকের পথে কাউকে হাটতে দেওয়া হবে না, দয়া করে কেউ তাদের পথে হাঁটবেন না। শহীদ পরিবারের জন্য তারা সকল প্রকার সহযোগিতা করবেন। পর্যায় ক্রমে তারা তাদের পরিবারের সদস্যকে চাকুরী দিয়ে ও সহযোগিতা করবেন।জামায়াতে ইসলামি নেতারা জাস্টিস প্রতিষ্ঠায় সকলকে মাহানবী( সাঃ) এর আদর্শকে লালন করতে অনুরোধ করেন।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে মুনাজাত ও দোয়া করেন।দোয়া শেষে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়।