ফর্মের ধারেকাছেও নেই বাংলাদেশ দলের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সম্প্রতি মাহমুদউল্লাহর ফর্মহীনতার কারণে বড় মাশুল গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। যার ফলে তাঁর সক্ষমতা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। বাংলাদেশ দলে কী তাহলে সময় ফুরিয়ে আসছে মাহমুদউল্লাহর!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩ রানে ফেরা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ম্যাচে সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন মাত্র ৬ রান। ব্যাট হাতে নিয়মিত ব্যর্থ হচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু এর চেয়ে বড় চিন্তার বিষয় মিডল অর্ডারে তাঁর দায়িত্ব পালনের ধরণ।
মাহমুদউল্লাহর জন্য মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করার সবচেয়ে উপযুক্ত মঞ্চ ছিল লঙ্কানদের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজ। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালনের মানসিকতা একটুও পরিলক্ষিত হয়নি তাঁর মধ্যে।
ইনিংসের শুরু থেকে বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টায় ব্যাটিং করে যাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। যার মাশুল তাঁকে গুনতে হচ্ছে ইনিংস বড় করার আগেই সাজঘরে ফিরে।
বেশিদিন আগের কথা নয়, মাহমুদউল্লাহ ছিলেন বাংলাদেশ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যিনি ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন তিনি।
নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে কাঁধের ইনজুরির কারণে বোলিং দিয়েও অবদান রাখতে পারছেন না এই অফ স্পিনার। বিশ্বকাপেও খেলেছেন ইনজুরিকে সঙ্গী করেই। ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন দলের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার, যা ছিল অনুমেয়। কিন্তু সাকিব আল হাসান এবং লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে লঙ্কান সফরে তাঁকে সঙ্গে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রত্যাশা ছিল সাকিব-লিটনের অভাব অনুভব করতে দিবেন না মাহমুদউল্লাহ।
কিন্তু প্রথম ম্যাচে ক্যাচ ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও নিরেস ছিলেন তিনি। এমনকি ব্যাট হাতেও ছিলেন ব্যর্থ, সংগ্রহ করতে সক্ষিম হয়েছেন মাত্র ৩ রান! শেষ দুই ম্যাচে ব্যাটিং দিয়ে কিছু একটা প্রমাণ করতে চেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। পারফর্মেন্সের বিবেচনায় আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য পর্যাপ্ত ফিট নন তিনি।
সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের পঞ্চপাণ্ডবের একজন বলা হয় মাহমুদউল্লাহকে। কিন্তু যেখানে অন্যান্যরা নিজেদের নিয়ে যাচ্ছে চূড়ায় সেখানে মাহমুদউল্লাহ ধারেকাছেও নেই তাঁদের।
লঙ্কান সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিব-তামিমের পর বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ হাজারি ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন মুশফিক। এ ম্যাচ মাহমুদউল্লাহর সুযোগ ছিল ৪ হাজারি ক্লাবে জায়গা করে নেয়ার। কিন্তু সেটাও করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
ক্যারিয়ার জুড়ে বল হাতেও নিজের প্রতিভা সেভাবে দেখাতে পারেননি এই অফ স্পিনার। তাঁর নামের পাশে রয়েছে মাত্র ৭৬ উইকেট। এখন দলে খেলছেন শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে। সেই দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ।
প্রত্যেক দলই প্রতি বিশ্বকাপের পর নতুন এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। বাংলাদেশ দলেও আসতে যাচ্ছে পরিবর্তনের স্রোত। সেই স্রোতে হারিয়ে যেতে পারেন মাহমুদউল্লাহ। কারণ তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বারবারই। এমনকি বিশ্বকাপ চলাকালে ঘটিত কিছু ঘটনা তাঁর ভবিষ্যতকে আরও অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ দলের ড্রেসিং রুমের বিশ্বস্ত সূত্র ক্রিকফ্রেঞ্জিকে জানিয়েছে, দলের কোনো পরিকল্পনায় সাকিবের না থাকার কারণ অধিনায়ক মাশরাফির সিদ্ধান্ত। বিশ্বকাপের বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচের পর মাহমুদউল্লাহকে একাদশের বাইরে রাখতে বলেছিলেন সাকিব, কিন্তু মাশরাফি তা করেননি।
সূত্রের ভাষ্য, ‘সাকিবের মতে, মাহমুদউল্লাহ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে জেতার কোনো অভিপ্রায় দেখায়নি। ৪১ বলে মাত্র ২৮ রানের ইনিংস খেলেছে সে, যেখানে বাংলাদেশের ২০ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৯০ রানের মতো। সেই সময় ড্রেসিং রুমের সবাই বিশ্বাস করেছিল এই রান তাড়া করা সম্ভব। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের ধরণ জেতার জন্য ছিল না এবং এটা মেনে নিতে পারেনি সাকিব।’
‘পরবর্তী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে যে আচরণ দেখিয়েছে মাহমুদউল্লাহ, তা সত্যিই হতাশাজনক। ড্রেসিং রুমে এসে সতীর্থদের বলেছিল, তার ব্যাটিংয়ে হাততালি দেয়ারও দরকার মনে হয় না কারো।’ সূত্র আরও যোগ করে।
জানা যায়, ব্যাটিংয়ে মাহমুদউল্লাহকে ছয় নম্বরে খেলানোয় বেশ অসন্তুষ্ট তিনি। উপরে ব্যাটিং করার সামর্থ্য রয়েছে তাঁর, বিশ্বাস করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। পুরো বিশ্বকাপ এই মানসিকতা নিয়েই পার করেছেন তিনি। যার বিপরীত প্রভাব পড়েছে তাঁর ব্যাটিংয়ে।
আরও কিছু ঘটনা এটাই প্রমাণ করে, মাহমুদউল্লাহ সঠিক মানসিক অবস্থায় নেই। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের সময় মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেছেন তিনি।
খুব শীঘ্রই নতুন অধিনায়কত্বের অধীনে নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাঠে এবং মাঠের বাইরে মাহমুদউল্লাহ নিজেকে পরিবর্তন না করলে এটা অনেকটাই নিশ্চিত যে বাংলাদেশ দলে তাঁর সময় ফুরিয়ে আসছে শীঘ্রই!