আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অনুপ্রবেশসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন ভারত ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা৷ আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমে কীভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে এই বিষয়টি?
ভারতের নাগরিকপঞ্জী হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া শুরু হবার পার থেকেই সংবাদমাধ্যমে বারবার উঠে আসছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের বিষয়টি৷ কিন্তু এবিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের বরাবরের একই মতামত- এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু৷ তাই নাগরিকপঞ্জী নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না৷ স্পষ্টীকরণ সত্ত্বেও, নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, পর্যটন ও রোহিঙ্গা সঙ্কটের চেয়েও ভারতের সংবাদমাধ্যমে বেশি করে চোখে পড়ছে অনুপ্রবেশ ইস্যু বিষয়ক প্রতিবেদন৷
‘নাগরিকপঞ্জী ভারতের অভ্যন্তরীন ইস্যু’- এই একই সুর শোনা গেছে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বৈঠকে৷ সেই সুরেই বাঁধা রয়েছে আসাম থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র ‘দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ’র প্রতিবেদন৷ শুধু তাই নয়, প্রথম পাতায় প্রকাশিত খবরে তারা গুরুত্ব দিয়েছে ২০১৪ থেকে ভারতে আসা অবৈধ বাংলাদেশিদের সংখ্যা নিয়ে রাজনীতির কথাও৷
আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র ‘দৈনিক যুগশঙ্খ’র লেখাতেও একই ঝোঁক৷ তাদের শিরোনাম ‘এনআরসি-ছুটদের (নাগরিকপঞ্জী-ছুট) উদ্বেগ বাড়িয়ে ভারত-বাংলা বৈঠক’৷ এই প্রতিবেদনে ধরা পড়েছে ভারতে আসা অবৈধ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তন বিষয়ক অস্পষ্টতা৷
আসামের বাংলা সংবাদপত্রগুলি যখন জোর দিচ্ছে অনুপ্রবেশের রাজনীতির ওপর, তখন সেখানের জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য সেন্টিনেল’ একই খবর পরিবেশন করেছে কিছুটা অন্য ঢঙে৷ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তারা জোর দিলেও খবরের কেন্দ্রে রাখা হয় ‘বঙাল খেদা’ আন্দোলনের পুরোধা সংগঠন ‘আসু’র মুখ্য উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যের বক্তব্যকে৷ মূলত অসমীয়াভাষীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় এই সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে কোথাও নেই নাগরিকপঞ্জী-ছুট বাঙালি বা অন্য কোনো বিষয়ের উল্লেখ৷
কেন ভারতের রোল মডেল বাংলাদেশ?
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংবাদপত্রের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় দু’টি পত্রিকা ‘এই সময়’ ও ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’৷ এই দুটি পত্রিকাতেই আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরের বিষয়টি৷ কিন্তু দুই জায়গায় বিষয়টির ভিন্ন উপস্থাপন৷
আনন্দবাজার পত্রিকা এই বৈঠকে আলোচিত বিষয় নিয়ে বলে, ‘‘বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের বিষয়টি আজ আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। নিজেদের দেশে অপরাধ করে জঙ্গি বা দুষ্কৃতিরা যে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেয়, দু’পক্ষই তা স্বীকার করে নেয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের দেশে জঙ্গি দমনে অভিযান শুরু হলেই জঙ্গিরা সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসে। পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ফিরে যায়। ভারতের পক্ষ থেকে ওই জঙ্গিদের গ্রেফতারে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়।”
ভারত-বাংলা বৈঠক নিয়ে ভারতীয় বাংলা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘এই সময়’ এর একটি প্রতিবেদন৷ সংবাদটির শিরোনাম ‘’আপনাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রোল মডেল’৷ সেখানে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসাদুজ্জামান খানকে এমন কথা বলেছেন৷
দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে সরাসরি দেখা করেন আসাদুজ্জামান খান৷ ‘এই সময়’র প্রতিবেদন বলছে, ‘‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল অভিহিত করে ভারতের বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশীদার হতে ভারতের আগ্রহ প্রকাশ করেন নরেন্দ্র মোদী।”
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে ভারতের সংবাদমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছেই৷ কিন্তু উল্লেখযোগ্য, অঞ্চলভেদে এই সফরকে নিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের নানাধর্মী প্রতিবেদন৷