জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: বিএনপির ৪১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হলেও বর্তমানে চরম কঠিন মুহূর্ত পার করছে দলটি।
বেশ কয়েকবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিএনপি এক দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে। দেশের রাজনীতিতেও কার্যত কোণঠাসা। এছাড়া দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে। দ্বিতীয় প্রধান তারেক রহমান প্রায় একযুগ লন্ডনে নির্বাসিত রয়েছেন। এ রকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে একদিকে যেমন হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে অপেক্ষায় রয়েছেন সোনালী সকালের।
দলীয় সূত্র জানায়, ৪২ তম বছরে বিএনপির কাউন্সিল, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকার বিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গঠন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সোনালী সকাল উপহার দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বিএনপির হাই কমান্ড।
পল্টন থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফিরোজ আলম পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই যে দুইটা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমাদের মা আমাদের কাছে নেই, তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানকে হাজার হাজার মাইল দূরে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি সরকারের দমন-পীড়নে অধিকাংশ নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এসব পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা যারা জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী, আমরা আগামীতে সোনালী সকালের স্বপ্ন দেখি।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ বছর পর বিএনপি তথা বাংলাদেশের ভ্যানগার্ড ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই কাউন্সিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা আগামী দিনে সোনালী সকালের স্বপ্ন দেখছি। ছাত্রদলের কাউন্সিলের পর অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসমূহের কাউন্সিল হবে, দলের কাউন্সিল হবে। প্রত্যেকটা জায়গায় যথাযথ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে নিয়ে যাবে।’
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির উদ্দেশ্য একটাই, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, মানুষের অধিকার যেগুলো কেড়ে নেয়া হয়েছে এগুলো ফিরিয়ে আনা। এগুলো সামনে রেখেই আগামীতে বিএনপি এগিয়ে যাবে। সামনেই ছাত্রদলের কাউন্সিল। এরপরে যেসব বিভাগে সমাবেশ বাকি রয়েছে এগুলো সম্পন্ন করা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আরও বেগবান করা।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভঙ্গুর, অনেকটা অনুপস্থিত। গণতন্ত্র উদ্ধার আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্য এখনও আমাদের মধ্যে জাগ্রত। সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার সংগ্রামেই আছি আমরা।’
বিএনপির কঠিন সময় পার করা প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘বিএনপি যতটুকু কঠিন সময় পার করছে তার চেয়ে বেশি কঠিন সময় পার করছে জনগণ। জনগণের অবস্থা ভালো থাকলে বিএনপির অবস্থা খারাপ থাকার কথা না।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চক্রান্তের একটি অংশ হিসেবে হচ্ছে খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকা। গণতন্ত্রের মুক্তি আর খালেদা জিয়ার মুক্তি এক ও অভিন্ন।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমাদের এখন খুব কেয়ারফুলি এগোতে হবে। রাজনীতি করতে গিয়ে দলকে ধ্বংস করে দেয়া যাবে না। কিছু করতে গেলেই ধরে নিয়ে যাবে, মামলা দেবে। যতক্ষণ না কোনো সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে আন্দোলনের ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু করা সম্ভব না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশকে বাঁচাতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। দেশের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। আর আমাদের প্রথম করণীয় হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা। এইসব উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নিয়ে আমরা সামনের দিনগুলোতে কাজ করে যাব।’
এদিকে বিএনপির রাজনীতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী জেল খাটছে। মামলা হামলার শিকার হয়েছে। কোনো প্রোগ্রাম করতে পারছে না। কিন্তু সবচেয়ে খুশির খবর হচ্ছে দলটি এখনও অক্ষত রয়েছে। দলের মধ্যে কোনো বিভাজন হয়নি। দলের কার্যক্রম চলছে। তবে প্রত্যাশিত কার্যক্রম তেমন হচ্ছে না। এখন বিএনপিকে হিসেব করে পরিকল্পনা মাফিক এগোতে হবে। আর দলের অঙ্গ সংগঠনগুলো আরও শক্রিশালী করে গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে নামতে হবে।’