শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

কাউন্সিলর রাজীবের আর্থিক লেনদেনের আলামত পাওয়া যায়নি

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯
  • ২১২ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বাসা ও কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় র‌্যাব। রাতভর এ অভিযানে শুধুমাত্র পাঁচ কোটি টাকার চেক ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। র‌্যাবের ধারণা, আগে থেকেই সতর্ক থাকায় কাউন্সিলর রাজীব আর্থিক লেনদেনের আলামত সরিয়ে ফেলেছেন।

বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনার মধ্যেই শনিবার (১৯ অক্টোবর) দিনগত রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকা রাজীবকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এ সময় ওই বাসা থেকে সাতটি বিদেশি মদের বোতল, একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, নগদ ৩৩ হাজার টাকা ও একটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।

র‌্যাব জানায়, সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি এবং দখলদারিত্বের মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে রাতভর মোহাম্মদপুরের বাসা ও কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।

মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, আমরা মোহাম্মদপুরে তার বাসা এবং অফিসে তল্লাশি করেছি। সেখানে তেমন কিছু পাইনি। কারণ আমরা যা বুঝতে পেরেছি তার বাড়িতে আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত যেসব ডকুমেন্ট ছিল সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

তবে তারই একজন সহযোগীর আত্মীয় বাড়ি থেকে একটি চেকবই উদ্ধার করা হয়েছে। বইটিতে দেখা গেছে, ব্র‌্যাক ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে একদিনে (তিনটি চেকের মাধ্যমে) পাঁচ কোটি টাকা জমা দেয়া হয়েছে। আমরা এগুলো তদন্ত করে দেখছি কোথায় টাকা জমা দিয়েছেন, টাকাগুলো কোথায় গিয়েছে।

আপাতত তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অর্জিত আয়ের উৎস এবং অর্থ পাচার পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং এই অর্থ তিনি কোথায় খরচ করেছেন দেখা হবে। যদি এখানে মানিলন্ডারিংয়ের কোনো বিষয় থাকে তখন তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা হবে।

ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার বলেন, রাজীবের সহযোগী এবং তার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন আত্মীয় বা অনাত্মীয় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমার তো আসলে তার বৈধ আয়ের কোনো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।

সারওয়ার আলম বলেন, তার যে একটি রাজকীয় বাড়ি রয়েছে এ বাড়িটির বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। বাড়ির প্রত্যেকটা আসবাবপত্র থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জিনিস সে বাইর থেকে আমদানি করে এনেছে। এসব জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত বলে আমাদের মনে হয়েছে।

তিনি বলেন, কাউন্সিলর হওয়ার আগ পর্যন্ত তার দৃশ্যমান কোনো ধরনের ব্যবসা বা পেশা ছিল না। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন থেকে যে সম্মানি পায় সেটা তার একমাত্র প্রধান আয়। এছাড়া যে অবৈধ লেনদেনের বিষয়গুলো রয়েছে, সেসব তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে দৃশ্যমান কোন ব্যবসাই ছিল না মোহাম্মদপুরের সুলতান তারেকুজ্জামান রাজীবের। বর্তমানেও কাউন্সিলর হিসেবে সরকারি সম্মানির বাইরে কোন আয়ের উৎস নেই। তবুও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন স্বঘোষিত ‘জনতার কাউন্সিলর’ রাজীব।

২০১৫ সালে কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় প্রার্থী ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারিয়ে নির্বাচিত হন তিনি।

মোহাম্মদপুর এলাকায় যুবলীগের রাজনীতি দিয়েই রাজীবের রাজনৈতিক জীবন শুরু। অল্পদিনেই নেতাদের সান্নিধ্যে মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নেন। এরপর অভিযোগ আছে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতাকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন রাজীব।

যুবলীগের সাইনবোর্ড আর কাউন্সিলরের পদটি ব্যবহার করে এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজিব। বিগত চার বছরে আট থেকে ১০টির বেশি নামিদামি ব্র‌্যান্ডের গাড়ি কিনেছেন। গুলশান ও মোহাম্মদপুরে আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। মোহাম্মদীয়া হাউসিং সোসাইটির ১নং রোড এলাকায় পানির পাম্পের জন্য নির্ধারিত জায়গায় বাড়ি বানিয়েছেন। বাড়ির জায়গাটির দামই প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com