নিজস্ব প্রতিবেদক: বাসের চালক ও হেলপার দ্বারা ঘটে যাওয়া বাজে অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । এবার এমনই একটি ঘটনা ফেসবুকে তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রী। তিনি প্রকাশ করেছেন, খালি বাসে চালক ও হেলপারের সঙ্গে লড়াই করে কিভাবে আত্মরক্ষা করে বাড়ি ফিরেছেন। ঘটনাটি গত ২৭ নভেম্বর ঘটে। তবে ওই ছাত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার ফেসবুকে এ নিয়ে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি সবার নজরে আসে।
ওই ছাত্রী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, আর পাঁচটা মেয়ের মতো আজ আমিও মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি! পটিয়া গিয়েছিলাম বোনের বাসায় বেড়াতে…সাধারণত ট্রেনেই আসা-যাওয়া করি আমি; বাসে বমিটিংয়ের প্রবলেম থাকার কারণে ওঠাও কম হয়।
দুলা ভাইয়ের বাসা মুন্সেফবাজার, গলি থেকে বের হলেই নাকি বাস পাওয়া যায় উনি বলেছিলেন, নতুন ব্রিজ কিংবা টার্মিনালের বাস। বাসা থেকে নেমে রিকশা নিয়ে মেইন রাস্তা অব্দি আসলাম। নেমে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই একটা ‘সোহাগ’ এর বড় বাস আসছিল। হাত নাড়ালাম। থামলো, বাস এ অতটা ভিড় ছিল না বললেই চলে, তবে খালিও কিন্তু ছিল না।
আমি কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলাম বহদ্দারহাট যাবে কি-না! উনি বললো যাবে, উঠলাম। জানালার পাশের সিট খুঁজছিলাম, মানুষ কম থাকলেও সবাই মোটামুটি জানালার পাশেই বসে ছিল। অতঃপর সিট না পেয়ে এক আন্টির পাশে গিয়েই বসলাম আমি।
প্রথম থেকে ৩ নং চেয়ারে। বাস চলছে। কন্ডাক্টর ছিলেন দুজন। একজন দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল আরেকজন টাকা তুলছিল।
কিছুক্ষণ পর একজন আসে, বলে ভাড়া দেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কত? জিজ্ঞেস করে কই যাবেন? আমি বললাম: মামা আমি ২নং গেইট যাবো, কোথায় নামলে সুবিধে হয়, উনি বললেন টার্মিনাল। আমি বললাম তাহলে টার্মিনাল এর ভাড়াই নেন।
উনি ৬০ টাকা নিলো, আর জিজ্ঞেস করলো একা কি-না, আমি বললাম জি। ভেবেছিলাম হয়তো ভাড়ার জন্য, বা ভাড়া নেয়ার জন্য জিজ্ঞেস করেছে।
এরপর থেকে উনি বারবার তাকিয়ে ছিল আমার দিকে, আমি অত পাত্তা না দিয়েই আবারো কানে হেডফোন গুজে বসে ছিলাম।
আমার পাশের আন্টি নতুন ব্রিজ নেমে যায়, আমি জানালার পাশে গিয়ে বসি। এরপর বহদ্দারহাট কি-না জানি না, একটা জায়গায় এসে বাস দাঁড়ায় এবং অনেকজন নেমে যায়, আমি উঠে নেমে যাচ্ছিলাম কন্ডাক্টর বলে আপনি না ২নং যাবেন?
আপনাকে ওখানেই নামাই দিবো বসেন, আমি দরজার পাশে প্রথম সিটে আবারো বসলাম। বাস ড্রাইভার মিরর দিয়ে বারবার তাকাচ্ছিল আমার দিকে, আমার সন্দেহ হতে থাকে, আমি পিছে তাকাই দেখি একটা মানুষও নাই।
আমি বললাম ভাই আমাকে নামাই দেন আমি ২নং গেইট যাবো না। যিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন উনি দরজাটা খুব তাড়াতাড়ি আটকে দেন। আমি চিল্লাই উঠে বললাম- ড্রাইভার বাস থামান আমি নামবো, উনি এমন ভান করছিলো যেন উনি আমাকে শুনতেই পাচ্ছে না।
আমি ৯৯৯ টাইপ করছিলাম, এ সময় কন্ডাক্টর এসে আমার ব্যাগ নিয়ে নেয়। আমি ব্যাগ আটকানোর জন্য উনার সঙ্গে টানাটানি করছিলাম আর সারাক্ষণ চিৎকার করছিলাম জানালা দিয়ে। কন্ডাক্টর আমাকে ধাক্কা দেয় আমি দরজার সঙ্গে খুব জোরে বাড়ি খাই। আমি পা দিয়ে দরজায় লাথি মারছিলাম, আর চিৎকার করছিলাম।
আমার হিজাব টানছিল দুজন কন্ডাক্টরের একজন। আমি কান্না করে করে লাথি মারছিলাম দরজায় আর নিজেকে বাচাঁনোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলাম। রাস্তার কিছু মানুষ ব্যাপারটি হয়তো নোটিশ করেছিল, আমি জানি না। ড্রাইভার বলে ছেড়ে দে, সুবিধা নাই।
বাস থামায় আমি জিনিস নিয়ে নেমে পুলিশ বক্স খুঁজছিলাম, ইভেন আমি চিনিও না জায়গাটা। বাসের নম্বর দেখতে পারিনি সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছিল। একটা রিকশা নিলাম আর বাসায় আসলাম। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি সুস্থ এবং আমার ক্ষতি করতে পারেনি।
জানি না হয়তো সুবিধে পায়নি বলে এই যাত্রায় আমি বেঁচে গেছি কিন্তু অন্যদিন সুবিধে পেলে হয়তো অন্য একটি বোনের বা মায়ের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি চান্দগাঁও থানা এলাকায়। ইতোমধ্যে ওই থানায় বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। মেয়েটির বাবা পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্তদের কাউকে আটক করা যায়নি।
চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম জানান, জড়িতদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা রয়েছে।