নিজস্ব প্রতিবেদক: এলাকাভিত্তিক বিস্তারিত নকশা বা ডিমার্কেশন না পেলে লকডাউন কার্যকর করা ‘সম্ভব নয়’ বলে জানিয়েছে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে এলাকাভিত্তিক বিস্তারিত ডিমার্কেশন চাওয়া হয়েছে। ডিমার্কেশন বা নকশা পেলে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লকডাউন কার্যকর করা যাবে। দুই সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৫টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি। এরমধ্যে দক্ষিণ সিটির ২৮টি ও উত্তর সিটির ১৭টি এলাকা রয়েছে। কমিটির গত শনিবারের সভায় এসব এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়। আর সিটি করপোরেশন বলছে, তারা এলাকাগুলোর নাম পেলেও লকডাউন কার্যকর করার জন্য অফিসিয়ালি মাদার প্রতিষ্ঠান (নিয়ন্ত্রক মন্ত্রণালয়) থেকে কোনও নির্দেশ পায়নি। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের যে ১৭টি এলাকার কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি, আমাকে যত দ্রুত সম্ভব জোন ও এলাকাভিত্তিক ডিমার্কেশন করে দিতে হবে। যদি সম্ভব হয়, কোন বাড়িতে, সম্ভব না হলে কোন লেনে, তার পরে হচ্ছে কোন মহল্লায়, কোন ওয়ার্ডে এটা আমাকে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তাহলে আমরা এলাকাগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে নিতে পারবো। কারণ আমাদের যেসব এলাকার নাম দেওয়া হয়েছে, সেটা কিন্তু অনেক বিরাট এলাকা। ম্যাপিং না করে দিলে এটা কার্যকর করা সম্ভব না। আমরা চাচ্ছি এলাকাকে যত কম্বাইন্ড করে দেওয়া যাবে, তত আমাদের ম্যানেজ করতে সুবিধা হবে।
ডিমার্কেশন আসলে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে কত সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমি আগেও বলেছি ম্যাপিং চলে এলে আমরা কাজ শুরু করবো। আমরা ২৮টি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) রেডি করেছি। ডিমার্কেশন পেলে সর্বনিম্ন ৪৮ ঘণ্টা ও সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমরা লকডাউন করতে পারবো। সেই প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। আমাদেরকে আগে জানাতে হবে, কোন এলাকার কতটুকু লকডাউন হবে।
তিনি আরও বলেন, পূর্ব রাজাবাজারে আমরা পরীক্ষামূলক লকডাউন করেছিলাম। এখন পর্যন্ত সেখানে সুন্দরভাবে লকডাউন কার্যকর রয়েছে। সেখানে অনেক অনেক চ্যালেঞ্জ চলে এসেছে। তাছাড়া রেড জোন এলাকার মানুষ সরকারি ছুটির আওতায় থাকবে। সেখানে অনেকেই আছে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাদেরকেও এই ছুটির আওতায় আসতে হবে। আমাদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কারণ জীবন এবং জীবিকাকে নিয়েই করোনাকে ম্যানেজ করতে হবে। আমাদের স্থানীয় কাউন্সিলর, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকও জোগাড় করতে হবে। সে বিষয়ে অলরেডি আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি।
অপরদিকে ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা তো একটি সরকারি সংস্থা। আমাদেরকে নির্দেশ দিতে হবে যে তুমি তোমার এই এলাকা লকডাউন করো। তাহলেই আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো। কিন্তু এই নির্দেশ তো কেউ আমাদের দেয়নি। এটা আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অফিসিয়ালি নির্দেশ দিতে হবে। এখন পর্যন্ত লকডাউনের বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনও নির্দেশনা আসেনি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা কমিটি করা হয়েছে। সেখানে আমাদের মেয়রকে রাখা হয়েছে। কিন্তু কমিটির নিচে কারও স্বাক্ষর নেই। এভাবে তো হতে পারে না।
ইমদাদুল হক বলেন, লকডাউনের তালিকায় মোহাম্মদপুর রয়েছে। এখন এই এলাকাতো অনেক বড়। আমাদের ডেমরা এলাকা রাখা হয়েছে। সেখানে চারটির মতো ওয়ার্ড রয়েছে। এখন ম্যাপিংয়ে সব ওয়ার্ড পড়ে কিনা, সেটাও জানার বিষয় আছে। আমরা বলেছি, এলাকাগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তা না হলে, কীভাবে লকডাউনে যাবো? আমরা এলাকাভিত্তিক ডিমার্কেশন চেয়েছি। এটা এটুআই (একসেস টু ইনফরমেশন) করছে।
সিইও আরও বলেন, আমরা লকডাউনের বিষয়ে মেয়রের সভাপতিত্বে আগামীকাল (মঙ্গলবার) বৈঠকে বসছি। প্রথমে আমাদের সব কাউন্সিলরকে ডেকেছি। পরে আবার নিষেধ করে দিয়েছি। কারণ কোন কাউন্সিলরের এলাকা লকডাউন এলাকায় পড়েছে, কোনটা পড়েনি সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। কাল সকালের মধ্যে যদি আমাদের ম্যাপিং পাঠানো হয়, তাহলে আমরা সেটা দেখে কোন কোন ওয়ার্ড পড়েছে সেটা নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মিটিংয়ে ডাকতে পারবো। সব মিলিয়ে কাল এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। আর উত্তর সিটির মেয়র অলরেডি বলেছেন ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। ম্যাপ পেলে লকডাউন কার্যকর করতে ডিএসসিসিরও একই সময় লাগবে বলে জানান তিনি।