প্রতিবেশী নারীকে হত্যাচেষ্টায় ফরিদপুরের প্রতারক সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা হবে। বুধবার ফরিদপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন।
বাসিন্দা সামিম বাদি হয়ে ২০১২ সালের ১২ মার্চ আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহার ও বাদি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেশী আঞ্জিরা বেগম এবং তার পরিবারের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিলেন সিকদার লিটন। একপর্যায়ে প্রতিবেশীকে তাদের ভিটা থেকে উচ্ছেদেরও চেষ্টা করেন। পরে তা না পারলে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেছিলেন লিটন। কিন্তু আঞ্জিরা বেগম সেই টাকা দিতে অস্বীকার করায় লিটন তাকেসহ অন্যদের ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন।
ওই ঘটনায় আঞ্জিরার ছোট ভাই সামিম বাদি ২০১২ সালের ১২ মার্চ আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন। প্রায় দশ বছরের বেশি সময় বিচার কাজ চলার পর আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ঠিক করেছে আদালত।
সিকদার লিটন হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা ও সাইবার অপরাধে দেশের বিভিন্ন জেলায় অর্ধডজনের বেশি মামলার আসামি। ফরিদপুর, খুলনা, পাবনা ও ঢাকার আদালতে মামলাগুলোর বিচার চলছে।
একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন সিকদার লিটন। তবে বন্ধ ছিল না প্রতারণা। ছদ্মবেশে নানাভাবে মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মামলাও হয়েছে এসব ঘটনায়।
পরে ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যা ব।
ফেসবুকে কুৎসা রটনায় দুটি মামলায় অভিযোগপত্র:
ফেসবুকে অশালীন মন্তব্য ও কুৎসা রচনার অভিযোগে গত মঙ্গলবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সুফিয়া বেগম রোজীকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করায় ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন লিটনের বিরুদ্ধে। অপর মামলাটি ঢাকা টাইমস সম্পাদকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুৎসা রটনা, মিথ্যাচার ও ভাবমূর্তি নষ্টের অপরাধে করা হয়েছে। ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আকিবুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা করেন।
অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পাবনায় মামলা:
ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে পাবনা জেলা আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ব্যবসায়ীক অংশীদার হিসেবে পাবনার একজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন প্রতারক লিটন। পরে ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ইন্দ্রজিৎ আমিনপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলাটি থানা পুলিশ ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুদক ওই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। বর্তমানে মামলাটির বিচারকাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানায় প্রাণনাশের হুমকি ও চেষ্টার অভিযোগে আরও একটি মামলা রয়েছে লিটনের বিরুদ্ধে।
খুলনাতেও আছে প্রাণনাশের মামলা:
খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের একটি মামলা করা হয়।
চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাত:
২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি) চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে এক তরুণের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেন প্রতারক সিকদার লিটন। দুই বছরেও চাকরি কিংবা টাকা কিছুই ফেরত পাননি ভুক্তভোগী নাজমুল। টাকা চেয়ে দীর্ঘদিন প্রতারক লিটনের কাছে ধরনা দিলেও টাকা তো দূরে থাক এখন উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। ভুক্তভোগী নাজমুল গরু বিক্রি ও জমি বন্ধক রেখে লিটনকে টাকা দেন। কিন্তু সেই টাকা আর তিনি ফেরত পাননি।