রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ০৪:২২ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

এনবিআর সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি থাকবেই: সিপিডি

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫
  • ১ বার পঠিত

সিটিজেন প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি চলতেই থাকবে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্কার না হওয়ায় প্রতিবছর এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না বলেও মত গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির।

রোববার (২২ জুন) সকালে রাজধানী গুলশানের একটি হোটেলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিয়ে আয়োজিত ডায়ালগে এসব কথা জানান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কর‍তে পারে না.. কেনো সেটা পারেনা? কারণ সেখানে কোনো কাঠামোগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখনো হয়নি। সংস্কার ছাড়া এই ধরনের কাঠামো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে রেখে এ রকম ঘাটতি চলতেই থাকবে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, বিজিএমইএ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনামুল হক খান, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার বাজেটে ঘোষণার পর আমরা যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি, যার কারণে জনগণ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মতামত নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি। আমার কাছে মূল বিষয় হচ্ছে রাজস্ব আয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রত্যক্ষ আয় বেশি, পরোক্ষ আয় কম। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো আমাদের পরোক্ষ কর যা মূলত সাধারণ জনগণের ওপর পরে সেটা বেশি। আমাদের রাজস্ব আয়ের দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছে পরোক্ষ কর। এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে প্রত্যক্ষ কর। কিন্তু বাজেটের দর্শন হচ্ছে পুনর্বন্টন। যাদের আয় বেশি তাদের থেকে বেশি কর আদায় করা। যারা অবহেলিত বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের ওই করের টাকা ব্যয় করা। অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা। পুনর্বন্টনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বাজেটে সে বড় ধরনের পরিবর্তন দিতে পারে নাই। অথচ জুলাই-আগস্টের পর আমাদের বড় আকাঙ্খা ছিল। এবারে ব্যতিক্রমী বাজেট হবে, আমরা দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।

মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, অর্থনৈতিক সমস্যা ও সংকটের সময় অন্তর্বর্তী সরকার বাজেটটি দিয়েছে। গত ৩ বছর ধরে অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। অর্থনীতির মূল সূচকগুলো নিম্নমুখী। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দুর্বলতম অবস্থায় ছিল। উচ্চমূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা- সব কিছু মিলিয়ে এই বাজেটটি প্রণীত হয়েছে। সেজন্য এই বাজেটের অগ্রাধিকার ঠিক করাটা চ্যালেঞ্জের। তবে মূল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থীতিশীলতান পুন:রুদ্ধার করা। সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর যেসব প্রক্ষেপণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনে হয়েছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক নিম্নমুখী, এর মধ্যে রপ্তানি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স এইগুলো ভালোর দিকে আছে। টাকা ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে একেবারে স্থবিরতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।

উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রক্ষেপণ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২৬ এর জন্য সাড়ে ৫ শতাংশ বলা হচ্ছে। ২০২৫ এর রিভাইজড বাজেটে এটা ছিল ৫ শতাংশ। অন্যদিকে বিবিএস বলেছে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ৪ শতাংশ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ করতে গেলে বেশ কিছুটা উল্লম্ফন দরকার। এই প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার বিনিয়োগ।

বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে এমন প্রশ্ন করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল বিনিয়োগ সরকারি বিনিয়োগ হয়ে আসছে। কারণ ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ আসছে না। সরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত সামান্য কম দেখানো হয়েছে। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ও জিডিপির অনুপাত দেখানো হয়েছে এখানে উন্নতি বা ২৪.৩ শতাংশ হবে। এই প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অতিরিক্ত ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। সাধারণ সময়ের তুলনায় যা ১২ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক সংকটের এসময় ব্যক্তিখাতের প্রবৃদ্ধি হঠাৎ এতো বেড়ে যাবে সেটা বোধগম্য না।

ফাহমিদা বলেন, মূল্যস্ফীতির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। ২০২৬ এ সাড়ে ৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি মে ২০২৫ এ ১০ শতাংশের ওপরে। সেখান থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে আনতে হলে বেশ খানিকটা প্রচেষ্টা দিতে হবে। বাজেট অন্তর্বর্তী সরকার প্রণয়ন করবে কী না আমরা জানি না। কিংবা নতুন সরকার করবে.. তারপরও যেসব অসামঞ্জস্যতা, ঘাটতি পাচ্ছি। বাজেটের একটা মধ্যবর্তী রিভিউ হওয়া প্রয়োজন। সেটা এসেসমেন্ট করে জনসম্মুখে প্রকাশ করা প্রয়োজন। বাজেটের মধ্যবর্তী একটা সংশোধন, এসেসমেন্ট ও রিভিউ করা দরকার। তারপর কাঠামোর মধ্যে থেকে পরিমার্জন করা প্রণয়ন, যাতে এর মধ্যে স্বচ্ছতা থাকে। এছাড়া বাজেট বাস্তবায়নেও নজর দেওয়া উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com