ক্রীড়া ডেস্ক : রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া খেলেছিল ফাইনাল। সে তিন বছর আগের কথা। ফ্রান্সের বিপক্ষে ওই ম্যাচ খেলে অবসরে যান ইভান রাকিতিচ, মারিও মানজুকিচ ও দানিয়েল সুবাচিচের মতো তারকারা। তাদের শূন্যতা প্রভাব ফেলেছিল ইউরোতেও। ইংল্যান্ডের কাছে হার, চেক রিপাবলিকের সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ড্র। নকআউটে খেলার আশার প্রদীপ নিভু নিভু হতে শুরু করেছিল। কিন্তু তা আবারও জ্বলে উঠলো। লুকা মদরিচের নেতৃত্বে স্কটল্যান্ডের মাঠে ৩-১ গোলের দুর্দান্ত জয়ে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়া।
শুধু তাই নয়, ‘ডি’ গ্রুপের শীর্ষে থেকে খেলতে নামা চেকদেরও পেছনে ফেলেছে তারা। গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলোতে জ্লাতকো দালিদের দল। ৩ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট চার। সমান পয়েন্ট পেলেও গোলপার্থক্যে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় স্থানে চেকরা। অবশ্য আগেই তারা নিশ্চিত করেছিল শেষ ষোলো, তবে চারটি সেরা তৃতীয় দলের একটি হয়ে খেলতে হবে তাদের।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ খেলে অজেয় থাকা স্কটল্যান্ড গ্লাসগোর হ্যাম্পডেন পার্কে উজ্জীবিত শুরু করে। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। হাজার হাজার দর্শক ১০ মিনিটের মধ্যে দুইবার মাথায় হাত দিয়েছে। ৬ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে ম্যাকগিনের শট ব্যাকপোস্টে রুখে দেন ক্রোট গোলকিপার লিভাকোভিচ। স্কটিশ মিডফিল্ডারের বাড়ানো ক্রস গোলমুখের সামনে অ্যাডামসের পায়ে লাগলে জালে বল জড়ানো ছিল সময়ের ব্যাপার। চার মিনিট পর ডাইকসের পাসে ২৫ গজ দূর থেকে অ্যাডামস গোলপোস্টের বাইরে মারেন বল।
মুহুর্মুহু আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত ক্রোয়েশিয়া হঠাৎই পাল্টা আক্রমণে যায়। ১৭ মিনিটে দারুণ কাউন্টার অ্যাটাকে গোল পায় তারা। জুরানোভিচের ক্রসে ব্যাকপোস্ট থেকে পেরিসিচের হেড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে স্কটল্যান্ডের জাল কাঁপান ভ্লাসিচ। ২০২০ সালের অক্টোবরের পর প্রথম আন্তর্জাতিক গোলে হ্যাম্পডেন পার্ক নিস্তব্ধ করে দেন তিনি।
২২ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া মদরিচের জোরালো শট ক্রসবারের কয়েক ইঞ্চি উপর দিয়ে গেলে ক্রোয়েশিয়া ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। দুই মিনিট পরই স্কটল্যান্ড সুযোগ পায়। রক্ষণে ক্রোটদের এলোমেলো শটে ম্যাকগিন বল পেয়ে যান বক্সেই, তার নিচু শট ফিরিয়ে দেন লিভাকোভিচ।
বিরতির আগেই দুর্দান্ত গোলে স্কটল্যান্ড সমতা ফেরায়। আবারও রক্ষণের ভুল, তাতে লক্ষ্যভেদ করেন ক্যালাম ম্যাকগ্রেগর। ডানপায়ের শটে চার ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে জালে বল জড়ান তিনি। ২৫ বছরে ইউরোপিয়ান মঞ্চে প্রথম গোলে বুনো উল্লাসে ফেটে পড়েন দর্শকরা। কয়েক মিনিট পরই আরেকটি সুযোগ হারায় স্বাগতিকরা। ও’ডনেলের ক্রস ব্যাকপোস্টে অ্যাডামস মাথা ছোঁয়ানোর আগেই লিভাকোভিচ পাঞ্চ করেন।
ম্যাচ ঘড়ির কাঁটা ঘণ্টা পেরোনোর পর ফের লিড নেয় ক্রোয়েশিয়া। কোভাচিচ বক্সের বাইরে বল পাস দেন মদরিচকে। ৬২ মিনিটে ক্রোট অধিনায়ক ডান পায়ের শটে ব্যবধান ২-১ করেন। ২০০৮ সালে ইউরোতে দেশের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ড গড়া মদরিচ ৩২ বছর ২৮৬ দিনে করা এই গোলে সবচেয়ে বয়স্ক গোলদাতার মর্যাদাও পেলেন। ৭৭ মিনিটে আরেকটি গোলে তার অবদান ছিল। তার কর্নার থেকে পেরিসিচের চতুর হেড ব্যাকপোস্টে আঘাত করে জালে জড়ায়। এরপর আর স্কটল্যান্ডের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি।
আগামী ২৮ জুন ‘ই’ গ্রুপের রানার্সআপ দলের বিপক্ষে শেষ ষোলো খেলবে ক্রোয়েশিয়া। পরের দিন ইংল্যান্ড খেলবে ‘এফ’ গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দলের বিপক্ষে।