শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে দেশের সংকটময় পরিস্হিতি সামাল দিতে সর্বসম্মতিক্রমে ন্যাশনাল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। পার্লামেন্টের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে এ কাউন্সিল গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
রোববার (২৯ মে) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ প্রস্তাব করেন তিনি। খবর দ্যা প্রিন্ট।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল কাউন্সিল প্রসঙ্গে বলেন, নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী, আমরা প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার প্রস্তাব দিয়েছি। মন্ত্রিসভাও পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের সদস্যরা দেশের রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারবেন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত নিয়েও কথা বলতে পারবেন।
পার্লামেন্ট পুনর্গঠনের ব্যাপারেও কাউন্সিলের সদস্যরা কথা বলতে পারবেন বলে জানান তিনি। এই কাউন্সিল গঠন করতে মন্ত্রিসভা ও সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে। আর এ অনুমোদন পেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপরই এ বিষয়ে পার্লামেন্টের অনুমোদন চাওয়া হবে। তবে সমালোচকরা বিক্রমাসিংহের এ রাজনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন। এতে সাধারণ মানুষের নায্য দাবিগুলো উঠে আসবে না বলেও মন্তব্য করা হচ্ছে।
এর আগে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। তার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলগুলো। এরপর সহিংসতার মধ্য দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এরপরই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় রনিল বিক্রমাসিংহকে। তাকে দায়িত্বে বসানোর মাধ্যমে দেশটিতে পরিবর্তনের আভাস দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে দেশটিতে নতুন সরকার গঠন হলেও এখনো সংকট কেটে উঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন সরকার নিয়েও এক ধরনের সংশয় কাজ করছে।
শ্রীলঙ্কায় লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট এবং অসহনীয় বিদ্যুৎ ঘাটতির জেরে সৃষ্ট রাজপথের আন্দোলন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে।
এ সংকটের সূচনা হয় ২০১৯ সালে ব্যাপক হারে কর নেয়ার পদক্ষেপের মাধ্যমে। এ সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও ভাটা পড়ে। ফলে দেশটির আয় কমতে থাকে। ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে হিমশিম খেতে থাকে শ্রীলঙ্কা। ঋণের বড় অংশই ছিল উচ্চাভিলাষী অবকাঠামাগত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনের কাছ থেকে নেয়া অর্থ। এ সময়ে আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধে হিমশিম খেতে থাকে সরকার। পরিস্থিতি খারাপ হয়ে সহিংসতায় রূপ নেয় এক সময় এবং অবশেষে সরকার পরিবর্তন হয়।