ছোটবেলা থেকে গণিতের নানা সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে পারতেন ওবাইদুল হক অভি। দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থেকেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হন তিনি। এবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল স্কলারশিপ ‘গ্র্যাজুয়েট টিচিং এসিসেন্টশীপ’ প্রোগ্রামে ডক্টর অব ফিলোসফি করবেন ওবাইদুল হক অভি। বিশ্বের সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বাসিত তিনি।
ওবাইদুল হক অভি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর ওয়ান ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডেড পিএইচডির সুযোগ পাওয়াটা অবশ্যই আনন্দের ব্যাপার। আল্লাহর রহমত ছিল তাই প্রথমবার চেষ্টায়ই এ সুযোগ পেয়েছি। তাই আমি অত্যন্ত খুশি।
তিনি বলেন, আলাবামাতে আবেদনের ডেডলাইন ছিল ১৫ জানুয়ারি, আবেদন করার পর ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখ ভর্তির অফার লেটার পাই এবং ফান্ড দিবে বলে গ্র্যাজুয়েট অফিস থেকে মেইল পাই যে এপ্রিলে আমাকে বিস্তারিত জানাবে। ১ এপ্রিল আমাকে ফান্ডিং লেটার দেয় যাতে বাৎসরিক ৫০ হাজার ৬২৪ ডলার ফান্ড দিবে টিউশন ফি, লিভিং এক্সপেন্স এবং হেলথ ইন্সুইরেন্স বাবদ। তারপর ২৪ এপ্রিল ভিসার জন্য আবেদন করি, তখন থেকেই ভিসা এপয়েন্টমেন্ট এর জন্য কাজ শুরু হয়। অনেক নির্ঘুম রাতের পর ইমার্জেন্সি বেসিসে ১৩ জুলাই ভিসা এপয়েন্টমেন্ট পাই, এবং ১৭ জুলাই ভিসা কালেক্ট করি।
ছোটবেলা থেকেই অভি চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে। তিনি বলেন, আমি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল ফলাফল করতে পারলে শিক্ষক হবার সুযোগ পাব। তারই ধারাবাহিকতায় গণিত বিভাগে ভর্তি হয়ে অনার্সে ৩.৯০ এবং মার্স্টাসে ৩.৯১ রেজাল্ট করি। তবে অর্নাসের প্রথম সেমিস্টারে ৩.৯৪ পেয়ে প্রথম হই, শিক্ষক হবার স্বপ্ন তখনই থিতু হয়। ভবিষ্যতে আমি নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবেই দেখতে চাই। যেহেতু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাইনি তাই আমেরিকায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিজেকে দেখতে পারলেই হয়তো দুঃখটা অনেকাংশেই লাগব হবে।
পড়াশোনায় সবসময় এগিয়ে থাকা অভি গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখায় মনেযোগী ছিলেন ছাত্র জীবনে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স ক্লাব, রক্তদাতা সংগঠনসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজ করেন অভি। এছাড়া “সংখ্যার আনন্দ” নামে গণিত বিষয়ক একটি বই প্রকাশ করা হয়। মানব রোবট সিনা তৈরি দলের মেন্টর ছিলেন। “বিজ্ঞানকথন” ও “দীপ্তি” নামের দুইটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন৷ এছাড়া জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ বিভিন্ন পুরষ্কার অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে অভি বুয়েটে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হয়। কিন্তু এমফিল প্রোগ্রাম শেষ করার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছাত্রদের দায়িত্ব যেন ঠিকভাবে পালন করে, সিজিপিএ খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই শুরু থেকেই এই বিষয়টা নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিজের ক্যারিয়ার প্ল্যান যত আগে করবেন সফলতা ততো আগে পাবেন।