বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৫ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::
অস্ত্রোপচারের পর আইসিইউতে সাইফ আলী খান খাদ্যপণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহারে ৭ দিনের আলটিমেটাম ব্যবসায়ীদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিল, পুলিশের লাঠিচার্জ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা: অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র নিন্দা টিউলিপ নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত: ইলন মাস্ক ইংল্যান্ডে হামজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন বাফুফে সভাপতি সর্বদলীয় বৈঠকে এলডিপি-লেবার পার্টির একাংশ যাবে না লুৎফুজ্জামান বাবরসহ মুক্তি পাচ্ছেন যে ৬ জন, তালিকা প্রকাশ অস্ত্র মামলায় ছাগলকাণ্ডের মতিউর ৩ দিনের রিমান্ডে ৬টি কমিশনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানো হবে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা

খাদ্যপণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহারে ৭ দিনের আলটিমেটাম ব্যবসায়ীদের

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ০ বার পঠিত

সিটিজেন প্রতিবেদকঃ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে বর্ধিত ভ্যাট, শুল্ক এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে ভোক্তার স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের ব্যবসায়ীরা। আগামী ৭ দিনের মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহারে যদি কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসর’স অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা এই হুঁশিয়ারি দেন।

বক্তারা বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের উপর ভ্যাট ও করের বোঝা চাপানো হলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের শ্রমজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও নিম্নআয়ের মানুষ। যে হারে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য বিস্কুট, কেক, জুসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। আর ভোক্তারা ক্রয় ক্ষমতা হারালে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে এরইমধ্যে এ খাতে সরাসরি কাজ করা প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিকের কাজ হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এসময় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ১৬০টিরও বেশি পণ্য দেশের বাইরে যাচ্ছে। অনুগ্রহপূর্বক এই মার্কেটটাকে ধ্বংস করে দেবেন না। জন্মের আগেই আমাদেরকে মেরে ফেলবেন না। আজকে ভ্যাট বাড়ালে কিন্তু আগামীকালই আপনার সন্তানের টিফিনের টাকা থেকে ৫টা বেশি নিতে আমরা বাধ্য হব।

তিনি বলেন, আমরা আগামী ৭ দিন আপনাদের সময় দিয়েছি। এই ৭ দিন আমরা আপনাদের কাছে যাব, আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করব। আপনার কাছে প্রয়োজনে ভিক্ষা চাইব, কিন্তু এরপর আর আপনাদের কাছে যাব না। তখন আমরা রাজপথে নেমেই দাবি আদায় করব। আমরা চাই না সেই পথ বেছে নিতে। আপনারা আমাদের কথা শুনুন, বোঝার চেষ্টা করুন।

আহসান খান চৌধুরী আরো বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। আগামী সাত দিনের মধ্যে যদি সরকার আরোপিত ভ্যাট ও শুল্কের সঙ্গে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব থেকে সরকার সরে না আসে, তবে স্বেচ্ছায় কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ এবং সচিবালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেব। আমরা ব্যবসায়ী, আমাদেরকে পথে নামাবেন না।

এসময় বাপার সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, আমরা এমন একটি খাত নিয়ে ব্যবসা করি যার সঙ্গে সরাসরি শ্রমজীবী নিম্নআয়ের মানুষ থেকে প্রান্তিক কৃষক জড়িত। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, এতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। দেশের মানুষের সংস্কৃতি যদি দেখি, চায়ের দোকান থেকে অনেক নিম্নআয়ের মানুষ সকালে এক কাপ চা, একটি বিস্কুট কিংবা কেক খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন। এখন যদি বিস্কুট ও কেকের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সঙ্গে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পায় তবে ৫ টাকার একটি বিস্কুট আর তৈরি করা সম্ভব হবে না। ফলে নিম্নআয়ের মানুষটি সহজে ক্ষুধা নিবারণের পথটি হারাবেন।

তিনি বলেন, সরকারকে বোঝানো হয়েছে যে ট্যাক্স বাড়লেই যে রেভিনিউ বাড়বে, আসলে তা ঠিক নয়। খাদ্যপণ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়লে ক্রয়-বিক্রয় কমবে। এতে করে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ, আমাদের শিল্পকে বাঁচান। এই সরকার অসংখ্য মানুষের আশা ভরসার সরকার।

হুঁশিয়ার দিয়ে এম এ হাশেম বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স যদি প্রত্যাহার না করেন, আমরা রাস্তায় নামবো। আমরা উৎপাদন বন্ধ করে দেব। যদি ভ্যাট-ট্যাক্স বেড়েই যায়, এমনিতেই আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, তারচেয়ে বরং আমরাই বন্ধ করে দেব।

সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের শ্রমশক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ এ খাতে নিযুক্ত। কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অবদান জিডিপিতে এখন ৭.৭ শতাংশ। বর্তমানে বাপার প্রায় ৪০০ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। এর বাইরেও প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাদ্যপণ্য উৎপাদন করছেন যেখানে ৫ লাখের বেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি কাঁচামাল সরবরাহকারী, খুচরা বিক্রেতাসহ পরোক্ষভাবে প্রচুর লোক এ খাতে যুক্ত রয়েছেন। বর্তমান কঠিন প্রেক্ষাপটে হঠাৎ এ ধরনের উদ্যোগে সবাই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বক্তারা বলেন, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য দেশের শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি খাতের একটি। আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের সুপারশপেও এখন ‘বাংলাদেশে তৈরি’ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের সরবরাহ প্রচুর বেড়েছে। এসব বাজারে জুস, ড্রিংকস, বিস্কুট, সস, জেলিসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বিশাল বাজার তৈরি হচ্ছে। এ খাতে রপ্তানি এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে হঠাৎ যদি বর্ধিত ভ্যাট আরোপ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয় তবে রপ্তানিখাত মুখ থুবড়ে পড়বে। উৎপাদন ব্যয় বাড়লে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের কাছে বাজার হারাতে হবে। এছাড়া দেশীয় পণ্যের দামের সঙ্গে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের দামের ব্যবধান কমে আসলে স্থানীয় শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই দ্রুত বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার ও প্রস্তাবিত গ্যাসের দাম না বাড়ানোর জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট বিভাগ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয়। সেখানে মেশিনে প্রস্তুতকৃত বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প ইত্যাদি পণ্যের উপর মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিঙ্কসের উপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়াও ফ্লেভার ড্রিংকস ও ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস (নন-কার্বোনেটেড) পণ্যের উপর সম্পূরক শুল্কের উপর যেখানে কোনো শুল্ক ছিল না, বর্তমানে তা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী পর্যায়ে আগে ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ ছিল যা বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com