নিজস্ব প্রতিবেদক:নির্যাতিত-নিপীড়িত শ্রমিকদের জন্য বিনা খরচে এক বছরে ৮৯ লাখ ছয় হাজার ২০৫ টাকা আদায় করেছে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা (লিগ্যাল এইড)। এর মধ্যে তাদের ৪১২টি মামলায় আইনি সহায়তা দিয়েছে সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের শ্রমিক সেল থেকে এ সেবা দেয়া হয়।
লিগ্যাল এইডের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসহায় শ্রমিকদের আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে ঢাকায় শ্রম আদালত ভবনে শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল স্থাপন করা হয়। পরে ২০১৬ সালে আরেকটি সেল স্থাপন করা হয় চট্টগ্রামে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ দুই সেল থেকে তিন হাজার ৪২৯ জন অসহায় শ্রমিককে আইনি পরামর্শ, ৪১২টি শ্রম মামলায় আইনগত সহায়তা এবং শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে ৫৩৫টি মধ্যস্থতায় ৮৯ লাখ ছয় হাজার ২০৫ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে।
সরকারি আইনগত সহায়তা কী?‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ অনুযায়ী, আইনগত সহায়তা হলো আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচার প্রার্থীকে কোনো আদালতে দায়ের যোগ্য, দায়ের হয়েছে বা বিচার চলছে এমন মামলায় আইনি পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া। আইনজীবীর ফিসহ মামলার প্রাসঙ্গিক খরচ বহনসহ অন্য যেকোনো সহায়তা।
সরকারি খরচায় আর্থিকভাবে অসমর্থ কারাবন্দীদের জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার লিগ্যাল এইড তথা আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার ওয়েবসাইটে অসমর্থ কারাবন্দীরা কিভাবে লিগ্যাল এইড পাবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। আইনগত সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করে আর্থিকভাবে অসমর্থ কারাবন্দী বিচারপ্রার্থীরা সিনিয়র জেল সুপার, জেল সুপার বা জেলারের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করবেন।
এরপর জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন ফরম পূরণ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। যথাযথ ফরমে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মামলার সর্বশেষ তথ্য জেনে নেয়া হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিস আবেদন পাওয়ার পর আইনজীবী নিয়োগে উদ্যোগ নেয়।
কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ ও মামলা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেন। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আইনজীবী কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। প্রয়োজন অনুযায়ী আইনগত সহায়তা বা আইনি লড়াই চালিয়ে যান সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।
চলতি বছরের গত ২৮ এপ্রিল সপ্তমবারের মতো দেশে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ পালিত হয়। দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় শেখ হাসিনার অবদান, বিনামূল্যে লিগ্যাল এইডে আইনি সেবাদান’।
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার সহকারি পরিচালক (প্রশসান) ও সিনিয়র সহকারি জজ কাজী ইয়াসিন হাবিব সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, দেশের দরিদ্র ও অসমর্থ জনগোষ্ঠী, শ্রমিক, সহিংসতার শিকার নারী-শিশু এবং পাচারের শিকার মানুষের জন্য আইনি সেবা নিশ্চিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আইন প্রণয়নের মধ্যদিয়ে সরকারি খরচায় আইনগত সহায়তা আইন প্রণয়ন ও কার্যক্রম শুরু করে।
কাজী ইয়াসিন হাবিব আরও জানান, পরে এই আইনের অধীনে বিভিন্ন বিধি প্রণীত হয়। বিধিতে কারা আইনি সহায়তা পাবেন তা নির্ধারণ করা হয়। দেশের সবকটি জেলা আদালত, চৌকি আদালত এবং সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড সার্ভিস চালু রয়েছে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি, মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে এ অফিসগুলোকে ‘এডিআর কর্ণার’ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
পক্ষসমূহের সম্মতির ভিত্তিতে লিগ্যাল এইড অফিসে বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসটির প্রথম অনুষ্ঠান ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিগ্যাল এইড কল সেন্টার ‘জাতীয় হেল্পলাইন’ এর উদ্বোধন করেন। এ হেল্পলাইনে ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন।