ফেনী প্রতিনিধি: শরীরে জ্বর নিয়ে দুই দিনেও কোনো হাসপাতালে স্থান পাননি সালমা খাতুন (৬৭)। অবশেষে বুধবার দুপুরে ফেনীর শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে ছেলে ও জামাতার সামনেই প্রাণ গেল তার। ছেলে কামাল উদ্দিন জানান, জ্বর থাকায় করোনাভাইরাস সন্দেহে কোনো বেসরকারী হাসপাতালেই তাকে ভর্তি নেয়নি।
তিনি দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের উত্তর আলীপুর গ্রামের বাদশা মিয়াজী বাড়ীর সফিউল্লাহর স্ত্রী।
কামাল উদ্দিন আরো জানান, গত ক’দিন ধরে তার মা প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন । সোমবার সকালে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ভর্তি করান। কিন্তু দুপুর দুইটা পর্যন্ত তাকে কোনো চিকিৎসা না দেয়ায় বিকালে স্বজনরা সেখান থেকে নিয়ে যান। এরপর তাকে একে একে শহরের আলকেমি হাসপাতাল, আল-বারাকা হাসপাতাল, কার্ডিয়াক হাসপাতাল, মেডিনোভা হাসপাতাল, ইবনে হাসমান হাসপাতালে ভর্তি করাতে চাইলেও কেউ ভর্তি করাতে রাজি হননি।
নিরুপায় হয়ে সন্ধ্যায় তাকে বাড়ি নিয়ে যান। বুধবার ফের হাসপাতালের উদ্দেশ্যে তাকে সিএনজি অটোরিক্সায় নিয়ে শহরে আসেন ছেলে কামাল উদ্দিন ও জামাতা নজরুল ইসলাম। তারা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভর্তি করাতে কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যান। এবারও ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সিএনজি অটোরিক্সায় তাকে রেখে ছেলে ও জামাতা মিলে পরামর্শ করছিলেন। এসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হতভাগ্য বৃদ্ধা।
পরিবার সূত্র জানায়, বুধবার বাদ আসর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সালমা খাতুনের জামাতা নজরুল ইসলাম জানান, কোনো হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন তার শ্বাশুড়ী। মৃত্যুর আগে তার ১শ ২ ডিগ্রি পরিমাণ জ্বর ছিলো। পপুলারে পরীক্ষার রিপোর্টে তার টাইফয়েড নির্ণয় হয় বলে তিনি জানান।
দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত বিন করিম জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেছে এমন তথ্য তাকে জানাননি। তাই নমুনাও সংগ্রহ করা হয়নি।
এদিকে কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মদ মিলন জানান, চিকিৎসা না থাকায় কোভিড সন্দেহজনক রোগীদের ভর্তি করা হয়না। প্রতিদিন অনেক রোগীই চিকিৎসা নিতে আসেন। কোনো রোগী ভর্তি হতে না পেরে সড়কে মারা গিয়েছেন তা তাদের জানা নেই।