নিজস্ব প্রতিবেদক: তৃতীয় পক্ষ বা ঠিকাদারী কোম্পানির মাধ্যমে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের নিয়মিত বেতন বোনাস ঠিকভাবে দেওয়া হয় না। আবার যখন তখন চাকরিচ্যুতিও করা হয়। সরকারিভাবে বেতন দেওয়া হলেও তার প্রায় অর্ধেক বেতন নিতে হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
নারী কর্মচারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি একদিনের জন্যও দেওয়া হয় না। ওই নারী মাতৃত্বকালীন সময় শেষে অফিসে এসে দেখেন তার চাকরি নেই। এমনকি আউট সোর্সিংয়ের মিলন নামে একজন কর্মচারী রাজশাহীতে মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে ক্ষোভে দুঃখে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাই আউট সোর্সিং পদ্ধতি বন্ধ করে সরকারিভাবে তাদের চাকরিতে বহাল দাবি করেন আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা।
শনিবার (৫ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতা আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাহবুবুর রহমান আনিছ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সারাদেশে প্রায় ৮ লাখ আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেই রয়েছে আড়াই হাজারের মতো কর্মচারী। সরকারি প্রত্যেকটি অফিসে এসব কর্মচারী ঘর মোছা থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজও করে দেয়। তাদের একদিনের জন্য ছুটি দেওয়া হয় না। অথচ করোনাকালীন সময়ে সবাই দিন ভাগ করে অফিস করেছেন। এতে কর্মচারীদের প্রায় দুই হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা বলতে পারছি না। করোনায় আক্রান্ত হোক আর মৃত্যুবরণ করুক না কেন তাদের কেউ সাহায্য সহযোগিতা করেনি। বরং গত ঈদের অনেকে স্ত্রী ছেলে মেয়ের কাপড় চোপড়ও কিনতে পারেনি। তাদের বোনাস তো পরের কথা, বেতনটাও দেওয়া হয়নি।
তিনি আউট সোর্সিং পন্থার কয়েকটি নেতিবাচক দিক তুলে ধরে বলেন, ঝুঁকি ভাতা ও প্রনোদনা থেকে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা বঞ্চিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক একাউন্টে বেতন বিল পরিশোধ করার কথা বললেও ঠিকাদাররা ব্যাংক একাউন্টে টাকা না দিয়ে হাতে হাতে টাকা দিয়ে থাকে। আউটসোর্সিং কর্মরত গাড়ীচালকদের সর্বোচ্চ ১০০ ঘন্টা অভার টাইম দেওয়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত কাজ করেও তারা আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় । হাসপাতালগুলাতে কখনো কখনো প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকায় ও নানা রকম জটিলতার কয়েক মাস বিনা বেতনেও কাজ করতে হয় অসহায় আউটসোর্সি কর্মচারীদের। জেলার উপজেলায় ঠিকাদারের হাত থেকে বেতন নিতে হচ্ছে। সরকারী নির্ধারিত বেতন না দিয়ে মনগড়া বেতন প্রদান করে এবং বেতন প্রদানের কোন নির্দিষ্ট তারিখ ও থাকেনা।
বছর শেষে জুন মাসে রি-নিউ করার জন্যও মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। একই সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতা সরকারি চাকরিজীবী ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুল মান্নান বিশ্বাস বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারের মাধ্যমে আউটসোসিং পন্থায় কৃতদাসের চাইতেও তাদের সাথে নিম্ন মানের ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের বেতন ভাগ বাটোয়ারা করে ঠিকাদার ও অনান্য কর্মকর্তা যোগ সাজেসে ভাগ করে নিচ্ছেন। তারা কোন জাগায় বেতন পাচ্ছেন তিন হাজার কোন জায়গায় ছয় হাজার টাকা। আবার কোন জায়গায় ১০ হাজার, কোন জায়গায় ১২ হাজার টাকা এমন কি কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ৩৩ মাস, ১৮ মাস, ১২ মাস, ৬ মাস একদম ই বেতন দেওয়া হয় না। তারা কিছু বললেই তাদেরকে বলা হয় তোমাদের জন্য দরজা খোলা অফিস থেকে বেড়িয়ে যাও তোমাদেরকে থাকতে বলছে কে এমন কি তাদের দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে বাসা বাড়ির ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করা হয়।
তিনি কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বলেন, সারাদেশের ১০-২০ তম গ্রেডের সকল সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দুর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বর্তমান বাজার অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি ও নবম পে স্কেলের মাধ্যমে সঠিক বেতন নির্ধারণের জোরালো আবেদন জানান তিনি। সচিবালয় থেকে ও সচিবালয়ের বাহিরের ১০-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারীদের পদ পদবি বৈষম্য মুক্ত বাহিরের কর্মচারীদের সম্মান হানি থেকে মুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
সারাদেশের সকল গাড়ী চালকসহ ঝুঁকিপূর্ণ সকলকে ঝুঁকিভাতা প্রদানের জন্য বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানান তিনি।
সকল ১০-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীদের সিলেকসন গ্রেড মর্গ ভাতা টিফিন ভাতা বৃদ্ধি যাতায়াত ভাতা বৃদ্ধি বিনা সুদে বাড়ী করার জন্য লোন দেওয়ার জন্য গৃহনির্মাণ লোন দেওয়ার জন্য আবেদন জানান তিনি।