দেশে প্রতিনিয়তই ঢুকছে নতুন নতুন মাদক। ধরা পড়ছেন মাদক ব্যবসায়ীরাও। তবু থেমে নেই মাদক আমদানি। সম্প্রতি ‘ডিওবি’ (ডাইমিথোক্সিবোমো এমফিটামিন) নামে এক ভয়াবহ মাদক উদ্ধার করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। দেশে এ প্রথম ধরা পড়ল ভয়াবহ ডিওবি। তবে এটি দেখতে এলএসডির মতোই।
গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান জানান, ডার্ক ওয়েবসাইট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির (বিট কয়েন) মাধ্যমে ২০০ ব্লট ডিওবি অর্ডার করেন খুলনার যুবক আসিফ আহমেদ শুভ। অর্ডারের এক মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকের চালানটি সরাসরি তার বাসায় পৌঁছায়। ডাকটিকিটের সাইজে বিশেষ ধরনের কাগজে থাকে এ মাদক। প্রতিটি কাগজকে ব্লট বলে থাকেন মাদক ব্যবসায়ীরা।
ডিএনসি আরো জানায়, শুভ এ চক্রের আরো দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- ৩০ বছর বয়সী অর্ণব কুমার শর্মা ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার মো. মামুনুর রশিদ। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।
বিশ্বের নানা দেশে মাদকরাজ্যে অস্তিত্ব ছিল ডিমেথোপিব্রোমো এমফেটামিন (ডিওবি)। এরপর মাদকদ্রব্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা সংশোধিত আইনে এ মাদককে ‘ক’ শ্রেণির তপশিলভুক্ত করে। ডিওবি দেখতে এলএসডির মতো। প্রতি ব্লট (পিস) ডিওবি বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। এ মাদক ব্যবহারের পর সেবনকারীর বিপ্লবী চিন্তাভাবনা জাগ্রত হয়। এর মাধ্যমে ‘তৃতীয় নয়ন’ খুলে যায় বলে দাবি সেবীদের।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা জানান, এলএসডির চেয়েও ভয়ংকর মাদক ডিওবি। এটা রক্তনালি সংকুচিত করে দেয়। দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল করে দেয়। সেবনের পর সেবনকারীকে প্রভাবিত করা যায়। ফলে সেবনকারী নির্দেশিত কাজ করতে উদ্দমী হয়ে ওঠেন। এই মাদক বেশি পরিমাণে সেবনে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
এ মাদক আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ উন্নত দেশগুলোতে মাদকসেবীদের ব্যবহার করে। তবে দেশে প্রথম এটার অস্তিত্ব মিলল। যুক্তরাষ্ট্রের মাদক বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ড্রাগ অ্যাবিউজের তথ্য অনুযায়ী, ডিওবিতে (ডাইমিথোক্সিবোমো এমফিটামিন) এক ধরণের স্টেরিওসেন্টার রয়েছে। যা রাই এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকের শরীরের লাইসার্জিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়। এটি সেবনকারীর রক্তনালি সংকুচিত করে দেয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। মাত্রার অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যু ঘটতে পারে। এটি পাউডার ও ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। এই ধরনের মাদকের প্রভাবে মানুষের মতিভ্রম ঘটে। বাস্তবতাকে মুহূর্তেই ভুলে গিয়ে অলীক বস্তু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন। এই মাদকটি মানুষের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের কার্যক্রম প্রভাবিত করে। এ কারণে মাদক ব্যবহারকারীর ব্যবহার, অনুভূতি এবং পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন করে।ডিওবি নেওয়ার পর সেবনকারী ‘হ্যালুসিনেট’ করে বা এমন দৃশ্য দেখে যা বাস্তবে নেই।
১৯৬৭ সালে রসায়নবিদ ও আমেরিকায় জনপ্রিয় ফার্মাসোলজিস্ট আলেকজান্ডার শুলগিন ডিওবি (ডাইমিথোক্সিবোমো এমফিটামিন) আবিষ্কার করেন। তিনি এক ধরনের ফেনিথিলামাইন দমনের কার্যকরী ওষুধ হিসেবে এটি আবিষ্কার করেন। রিসিপ্ট দিয়ে মধ্যস্থতা করা ডাউনস্ট্রিম প্রভাবগুলোকে ট্রিগার করার ক্ষেত্রে ডিওবির উচ্চতর কার্যকারিতা দেখানো হয়েছিল।