শাহানারার বয়স ৩১ বছর। মানুষ হয়েছেন এতিম খানায়। গত একমাস আগে মৎস্য বিভাগের একটি প্রশিক্ষণে কাজ করতে আসেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাস্বার এলাকায়। কিন্তু গ্রামটি তার পরিচিত মনে হচ্ছিল। একপর্যায়ে স্থানীয় সুজন নামের এক যুবকের মাধ্যমে নিজ পরিবারের খোঁজ পান তিনি। এ সময় গর্ভধারিণী মা’কে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহানারা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২৫ বছর আগে কলাপাড়া থেকে হারিয়ে যান ৬ বছরের শাহানারা। পরে তাকে বিভিন্ন সময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেন তার মা শিরিন বেগম ও পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাননি। শাহানারা গত একমাস আগে মৎস্য বিভাগের একটি প্রশিক্ষণে কাজ করতে আসেন নিজ গ্রামে কিন্তু তখনও জানতেন না এটাই তার জন্মস্থান। অবশেষে খুঁজে পান তার জন্মভূমি।
শাহানারা উপজেলার ধুলাস্বার ইউনিয়নের পশ্চিম ধুলাস্বার গ্রামের মৃত আলী হোসেনের মেয়ে। বর্তমানে তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠি গ্রামের আ. খালেকের স্ত্রী। তার ১৩ বছরের এক কন্যা ও পাঁচ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
শাহানারা বলেন, ‘ছোট বেলায় কীভাবে আমি বরিশাল যাই সেটা আমার মনে নেই। তবে সেখানকার এক মহিলা আমাকে নিয়ে বরিশালের একটি এতিমখানায় দিয়ে আসেন। পরে আমি সেখানেই বড় হই আর আমার নাম রাখা হয় ইয়াসমিন। ১৬ বছর আগে আ. খালেকের সঙ্গে আমাকে বিয়ে দেন জেলা প্রশাসক। আমি এখন পরিবারের সঙ্গে বরিশাল থাকি’।
তিনি আরো বলেন, ‘গত কয়েক মাস আগে আমি সরকারিভাবে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে ট্রেনিং করতে এই গ্রামে আসি। আসার পর থেকেই কেমন যেন আমার কাছে এই গ্রামটা পূর্ব পরিচিত মনে হয়। পরে আমি এখানের পরিচিত একজনের সহযোগিতায় আমি আমার পরিবারের খোঁজ পাই। আমি আমার হারানো পরিবারকে খুঁজে পেয়েছি। আমি সত্যিই অনেক খুশি’।
শাহানারার (ইয়াসমিন) মা শিরীন আক্তার বলেন, আমার মেয়ে যখন হারিয়ে যায় তখন তার বয়স ৬ বছর। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও তাকে খুঁজে পাইনি। আল্লাহ আমার মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুর রহিম বলেন, গতকাল আমার কাছে আসার পরে আমি বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে তার পরিবারের সন্ধান পাই। পরে তার হারিয়ে যাওয়ার কথা উভয় পক্ষের কাছে শুনে নিশ্চিত হই যে সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি এই শাহানারা। আজকে তিনি তার মায়ের কাছে ফিরেছেন। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, তারা যেন সারা জীবন সুখে থাকেন।