রাজধানীর পোস্তগোলা সেতু (বুড়িগঙ্গা-১) সংস্কার কাজের কারণে ব্রিজে যান চলাচল সীমিত করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে যানবাহনের চাপে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে বাবুবাজার ব্রিজে (বুড়িগঙ্গা-২)।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ব্রিজের ওপর বাস, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন গাড়ির দীর্ঘ লাইন। যানজটের কারণে অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই ব্রিজ পার হচ্ছেন।
যাত্রীরা জানান, এই সকাল বেলাতেই তীব্র যানজট তৈরি হয়ে ব্রিজের ওপর। এতে গন্তব্যে যেতে বিলম্ব হচ্ছে।
যানজটের কারণে বাস থেকে নেমে হেঁটে ব্রিজ পার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাইফুল জানান, মাস্টার্সের ক্লাস থাকায় শুক্রবারেও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু বাসা থেকে বের হয়েই পড়তে হয়েছে জ্যামের মুখে। গাড়িতে অর্ধেক ব্রিজ পার হতে পারলেও লেগে গেছে অনেক সময়। তাই সময় বাঁচাতে ও দ্রুত ক্যাম্পাসে যেতে হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছি। ওপার থেকে অন্য গাড়ি নেব।
রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় এলাকায় বাসের অপেক্ষায় থাকা তিশা জানান, ঢাকামুখী ও ঢাকা ছাড়ার উভয় রাস্তায়ই জ্যাম লেগে আছে। তবে ঢাকামুখী গাড়ির চাপই বেশি। এতে বাবুবাজার ব্রিজে যানযট সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মিলছে না পর্যাপ্ত গাড়িও। যেগুলোও বা চলছে, সেগুলো যাত্রী ভরা। ফলে বিলম্ব হচ্ছে যাত্রা।
এদিকে অনেক ব্যবসায়ীকেই পণ্য হাতে ব্রিজ পার হতে দেখা গেছে। তারা জানান, রাজধানীর কারওয়ানবাজার ও শ্যামবাজার থেকে পণ্য কিনে কেরানীগঞ্জের বাজারগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিদিন সকালেই। তবে আজ জ্যামের কারণে সবজি-মুরগি হাতে করে নিয়েই ব্রিজ পার হতে হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের মুরগি বিক্রেতা রিপন জানান, ব্রিজে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এতে পণ্য ঠিকমতো বাজারে আনতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। প্রায় ১ ঘণ্টা বসে থেকে পরে কর্মচারীদের নিয়ে হেঁটে কয়েকবারে মুরগি নিয়ে দোকানে এসেছি।
বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আলমগীর জানান, পোস্তগোলা ব্রিজের সংস্কার কাজের প্রভাব পড়েছে বাবুবাজার ব্রিজে। এতে এখান দিয়ে বেড়েছে বড় গাড়ির চাপ। ফলে কিছুটা ধীর গতিতে চলছে গাড়ি।
তবে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে নামার পর রাস্তা মোটামোটি স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।
এদিকে পোস্তগোলা সেতুর সংস্কার কাজ চলায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
এর আগে এক গণ বিজ্ঞপ্তিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, পোস্তগোলা সেতুর রুটিন সংস্কারের অংশ হিসেবে রেট্রোফিটিং ও দুটি গার্ডার মেরামত শুরু হয়েছে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে। এই সংস্কার চলবে ৮ মার্চ পর্যন্ত।
এতে প্রায় ৩৪ বছর বয়সী সেতুটির ১৬ দিনের এ সংস্কার কাজ চলাকালে ঢাকাসহ ২১ জেলার যানবাহনের যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাড়তি যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই বিকল্প সড়ক নির্ধারণের সেতুর সংস্কার কাজ চলাকালীন ঢাকা মহানগরের বাইরে থেকে ভারী যানবাহনগুলো চলাচলের জন্য সম্ভাব্য রুটগুলোর জন্য দুটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এর একটি ভারী ও আরেকটি হালকা যানবাহন। বাবুবাজার কেন্দ্রিক ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করবে। ফিরতি পথেও একই রুট ব্যবহার করবে।
ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে যাত্রাবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা যানগুলো ধোলাইপাড় বাসস্ট্যান্ড ও বাবুবাজার সেতু হয়ে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে। গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহন পাটুরিয়া দৌলতদিয়া ফেরি ব্যবহার করবে। দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন চাঁদপুর ও শরীয়তপুর ফেরি ব্যবহার করবে।
আর দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহার করবে।
হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু থেকে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামমুখী যানবাহন শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ, মুক্তারপুর সেতু, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, মদনপুর হয়ে যাতায়াত করতে বলা হয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে পদ্মা সেতুমুখী যানবাহন মদনপুর থেকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু-মুক্তারপুর হয়ে শ্রীনগর দিয়ে পদ্মা ওপরে যাতায়াত করবে।
আর পদ্মা সেতু থেকে ঢাকাগামী হালকা যানবাহন শ্রীনগর-দোহার-নবাবগঞ্জ- কেরানীগঞ্জ সড়ক, তুরাগ-রোহিতপুর, আব্দুল্লাহপুর-রাজাবাড়ি বাজার-কোনা খোলা মোড়-বছিলা সেতু-মোহাম্মদপুর সড়ক ব্যবহার করবে।
চীনা কারিগরি সহায়তা ৭২৫ মিটার দীর্ঘ পোস্তগোলা (বুড়িগঙ্গা-১) সেতুটি চালু হয় ১৯৮৯ সালে।