নিজস্ব প্রতিবেদন, সিটিজেন নিউজ: বিমানবন্দর গোল চত্বরের পূর্ব পাশে বাবুস সালাম মসজিদ মাদরাসা কমপ্লেক্স মার্কেট দখল নিতে আজ সকাল ৮.৩০ মিনিটে ২৫-৩০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালায়। পরে মার্কেটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয় ।
বাবুস সালাম মসজিদ মার্কেট দখল নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষে চার জন আহত হন বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ এই মার্কেটটি নিয়ে চলছে দখল ও বে-দখলের খেলা। মার্কেটটি নিয়ন্ত্রীনে নিতে দুটি পক্ষ সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। জানা যায় ২০০২ইং সালে সৈয়দ মোস্তাক হোসেন রতন মসজিদ কমিটির মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হন।
মসজিদ মার্কেটের অধিকাংশ দোকানগুলো নিজ আত্মীয় স্বজনের নিকট ভাড়া দেন। ভাড়াটিয়ারা আবার বড় অংকের এডভান্স নিয়ে বেশি অংকের মাসিক ভাড়ায় অন্যের নিকট ভাড়া দেন। ২০০৮ইং সালে তাকে মোতাওয়াল্লী থেকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করা হয়। পরবর্তীতে হাই কোর্টে মামলা করলে মহামান্য আদালত বাবুস সালাম মাদ্রাসা ও মসজিদ মার্কেটি দেখা শোনার জন্য ওয়াকফ প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়।
ওয়াকফ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ভাড়াটিয়া দোকানদারদের কাগজ পত্র ও ভাড়ার প্রমানাধী চাইলে সৈয়দ মোস্তাক হোসেন রতনের কিছু লোক বাধা সৃষ্টি করে। এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে বিষয়টি শান্ত হয়। পরে ওয়াকফ প্রশাসনের সহকারী প্রশাসক মোঃ আব্দুল কুদ্দুসের নিকট ভাড়াটিয়ারা দোকানের কাগজপত্র জমা দেন। সহকারী প্রশাসক জানান দীর্ঘদিন যাবৎ মসজিদ মার্কেটটি নিয়ে ঝামেলা ছিল। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে আমাদেরকে দেখা শোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাই আমরা মার্কেটটিকে শৃঙ্খলায় আনার চেষ্টা করছি।
মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক নান্নু জানান সৈয়দ মোস্তাক হোসেন রতন দীর্ঘ দিন যাবৎ টাকা পয়সা আত্মসাৎ করে আসছেন। তিনি মসজিদ ফান্ডে মাত্র তিন লক্ষ টাকা জমা করতেন অথচ ভাড়া উঠে দশ লাখ টাকার মত। বাকি টাকা নিজে আত্মসাৎ করতেন। আমরা মসজিদ ও মাদ্রাসার টাকা আত্মসাৎ করতে চাই না। তাই মসজিদে প্রকৃত আয় মসজিদ ও মাদ্রাসার ফান্ডে থাকুক আমরা সেটা চাই।
এদিকে ৬ ফেব্রুয়ারি,২০১৭ রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বর সংলগ্ন জামিয়া বাবুস সালাম জামে মসজিদ ও এতিমখানার ১২ কোটি টাকা আয়ের মধ্যে ৭ কোটি টাকা করার অভিযোগে মোস্তাক হোসেন রতন ও তার দুই সহযোগী নিকট আত্মীয় সহ তিনজনকে আসামী করে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জামিয়া বাবুস সালাম জামে মসজিদ ও এতিমখানার প্রতিষ্টাতা প্রিন্সিপাল মো: আনিছুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, মোস্তাক হোসেন রতন (৫৮), তার মেয়ের জামাত মো: সোহেল (৩২) ও ভাগ্নী জামাতা মো: মোবারক হোসেন (৩৭)। বিমানবন্দর থানার মামলা নম্বর-১২। । মামলার ধারা ৪২০/৪০৬/৫০৬/১০৯ পেনাল কোর্ড (পিসি) দন্ডবিধি রুজু করা হয়েছে।
উল্লেখ করা হয় যে, ১৯৯৭ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিমানবন্দর জামিয়া বাবুস সালাম জামে মসজিদ ও এতিমখানার দীর্ঘ ২০ বছরে মধ্যে বিভিন্ন সময়ে উক্ত মসজিদ ও মাদ্রাসার দোকান ভাড়া,মোবাইল টাওয়ার ও সাইনবোর্ড এর মাসিক ভাড়া থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা আয় করা হয়। এর মধ্যে থেকে মামলার প্রধান আসামী মোস্তাক হোসেন রতন (৫৮), তার মেয়ের জামাতা মো: সোহেল (৩২) ও ভাগ্নী জামাতা মো: মোবারক হোসেন (৩৭) সহ উপরোক্ত ব্যক্তিরা ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
উল্লেখ যে, মোস্তাক হোসেন রতন মাদ্রাসার বেশির ভাগ দোকান স্বনামে-বেনামে তার ভাগ্নী জামাতা সহ বিভিন্ন আত্বীয় স্বজনদের নামে নামমাত্র মূল্যে দোকানগুলো ভাড়া দেখিয়ে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেছে। কিন্তু উল্লেখিত দোকান সমূহ বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে প্রায় ৫ গুনের ও বেশি ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা গোপনে আত্মসাৎ করেছেন।
জামিয়া বাবুস সালাম জামে মসজিদ ও এতিমখানায় বর্তমানে সাড়ে ৬শ গরিব ছাত্র নূরানী মক্তব থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়াশোনা করছেন এবং ২৬জন সুদক্ষ শিক্ষক দ্বারা এটি পরিচালিত হয়ে আসছে। সাধারণ জনগণের যাকাত,দান ইত্যাদি দ্বারা বর্তমানে মাদ্রাসার খরচের চাহিদা চলে।