বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আবাসিক হলে এক বহিরাগত শিক্ষার্থীকে চার হাজার টাকা ভাড়ায় হলে থাকার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের ২৩০ নং কক্ষে বহিরাগত এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে চার হাজার টাকার বিনিময়ে সিট ভাড়া দেয়া হয় বলে ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা ও ইতিহাস বিভাগের মোহাইমিনুল ইসলামের মধ্যস্থতায় কক্ষটিতে সিট ভাড়া দেয়া হয়। তারা দুইজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ তম ব্যাচের (৩য় বর্ষ) শিক্ষার্থী ও আল বেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র। তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার অনুসারী।
সূত্র জানায়, আল বেরুনী হলের ২৩০ নং কক্ষটিতে সাধারণত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাঁধন’ এর হল ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদক থাকেন। কিন্তু বাঁধনের হল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ওই কক্ষে থাকলেও সভাপতি সোহেল রানা ছাত্রলীগের রাজনীতি করায় ‘পলিটিকাল ব্লকে’ থাকেন।
এদিকে মোহাইমিনুলের এলাকার এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের জন্য তার কাছে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকার জায়গা না পাওয়ায় মোহাইমিনুল ওই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে হলে নিয়ে আসেন। পরে তাকে রাখার জন্য সোহেলকে জানান। এরপর তাদের দুজনের মধ্যস্থতায় ৪ হাজার টাকার বিনিময়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে ২৩০ নং কক্ষে সোহেলের সিটে থাকতে দেন।
গত কয়েকমাস যাবৎ বহিরাগত ওই শিক্ষার্থীকে হলটির ২৩০ নং কক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায় বলে হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি টাকার বিনিময়ে হলে সিট ভাড়া দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর আল বেরুনী হলের সিনিয়র ছাত্রলীগ কর্মী এনামুল হকের সমঝোতায় ভর্তিচ্ছু ওই বহিরাগতকে ভাড়ার তিন হাজার টাকা দিয়ে বের করে দেয়া হয়। এনামুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী।
সিরাজ নামে ভর্তিচ্ছু ওই শিক্ষার্থী বলেন, যখন প্রথম আসি মোহাইমিনুল ভাই হলে রাখবে বলেছিল। পরে সোহেল ভাইয়ের কাছে নিয়ে যায়। টাকার ‘কন্ট্রাক্ট’ মোহাইমিনুল ভাইয়ের সঙ্গে হয়েছিল। তখন থাকার জন্য তারা দুজন চার হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি সে টাকা দিয়েছিলাম।
তবে টাকার বিনিময়ে বহিরাগতকে হলে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সোহেল রানা। তিনি বলেন, টাকা বিনিময়ের বিষয়টি আমি জানি না। মোহাইমিনুল আমার কাছে ওই ছেলেকে নিয়ে আসে। কিন্তু তার থাকার জায়গা না থাকায়, আমার ২৩০ নং কক্ষের সিটে থাকতে দেই। এর বেশি কিছু জানি না।
মোহাইমিনুল বলেন, আমার প্রতিবেশির কাছ থেকে কেন আমি টাকা নেব। আমার কাছে কোচিংয়ের জন্য এসেছিল, আমি তাকে সোহেলের রুমে থাকতে দেই। সে আমার কাছে কোচিংয়ের জন্য এগারো হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু কোচিং বাবদ সাত হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি চার হাজার টাকা আমার কাছে ছিল। সে যাওয়ার সময় তাকে চার হাজার টাকা ফেরত দেই।
ছাত্রলীগ কর্মী এনামুল হক বলেন, হলে টাকার বিনিময়ে বহিরাগত রাখার বিষয়টি জানার পরে মোহাইমিনুল ও সোহেলকে ডাকি। তারা টাকা বিনিময়ের বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে ভর্তিচ্ছু ওই বহিরাগতের চার হাজার টাকা মোহাইমিনুলের কাছে থাকার বিষয়ে জানতে পারি। পরে তাদেরকে টাকা ফেরত দিতে বলি।
এ বিষয়ে আল বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম জানান, হলে টাকার বিনিময়ে কাউকে রাখা যেমন অপরাধ একইভাবে যিনি থাকবেন তিনিও অপরাধী। ভাড়ায় বহিরাগত থাকার বিষয়ে জানতাম না। খোঁজ নিয়ে দেখবো।