নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী রোববার (১৭ নভেম্বর)। গত বছরের তুলনায় এবার দুটি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী এক লাখ ৯২ হাজার ৬৩২ জন কমেছে। এবার মোট পরীক্ষার্থী ২৯ লাখ ৩ হাজার ৬৩৮ জন। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ২৭০ জন।
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন দুটি পরীক্ষার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর প্রাথমিক সমাপনীতে ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৬৭ জন ও ইবতেদায়ী সমাপনীতে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৭১ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সাথে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। ১১তম বারের মতো প্রাথমিক সমপনী ও দশমবারের মতো ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা হচ্ছে।
জাকির হোসেন বলেন, ‘আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। পরীক্ষা চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত।’
পরীক্ষা প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টায় শেষ হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে। মোট ৬টি বিষয়ের প্রতিটিতে ১০০ করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ছাত্র ১১ লাখ ৮১ হাজার ৩০০ জন ও ছাত্রী সংখ্যা ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৯৬৭ জন। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা ২ লাখ ২৩ হাজার ৬১৫ জন কমেছে। ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এক লাখ ৮৭ হাজার ৮২ জন ছাত্র এবং এক লাখ ৬৩ হাজার ২৮৯ জন ছাত্রী অংশ নিচ্ছে। এ পরীক্ষায় গতবারের তুলনায় ৩০ হাজার ৯৮৩ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে।’
এবারের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৪ জন বেশি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটি আশাব্যাঞ্জক যে, মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। আরো আশার কথা এই যে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৩ হাজার ৩৪৭ জন এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ২৩৬ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে।’
সারাদেশে সর্বমোট ৭ হাজার ৪৭০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে রয়েছে ৭ হাজার ৪৫৮টি এবং দেশের বাইরে ৮টি দেশে ১২টি কেন্দ্র (সৌদি আরবে ৪, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২, বাহরাইনে ১, ওমানে ১, কুয়েতে ১, লিবিয়ায় ১, গ্রিসে ১, কাতারে ১টি কেন্দ্র) থাকবে। বিদেশে অবস্থিত কেন্দ্রগুলোতে মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৬১৫, এরমধ্যে ছাত্র ২৮৯ জন ও ছাত্রী ৩২৬ জন।’
‘সমাপনী পরীক্ষা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্নের জন্য ইতোমধ্যে যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার সাথে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মুদ্রণ ও বিতরণ কাজ শেষ হয়েছে। প্রশ্নপত্র বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে এবং তা সংশ্লিষ্ট থানা/ট্রেজারিতে রাখা হয়েছে। পরীক্ষার দিন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বজায় রেখে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নপত্র উপজেলা থেকে কেন্দ্র সচিবের নিকট পৌঁছে দেয়া হবে। দুর্গম এলাকার ১৮৪টি কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছে।’
পরীক্ষার দায়িত্ব পালনে ন্যূনতম অবহেলা বা অনিয়মের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
যে কারণে কমেছে পরীক্ষার্থী
প্রাথমিক সমাপনীতে শিক্ষার্থী কমেছে কেন- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী আমাদের জন্মের হার কিছুটা কমেছে। সেই কারণে আস্তে আস্তে আমাদের ছাত্র-ছাত্রী কমে যাচ্ছে।’
এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘২০১৫ সালে প্রাথমিকে সর্বাধিক পরীক্ষার্থী ছিল ২৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৭৬ জন। এরপর থেকে কমা শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালে ২৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭ জন, ২০১৭ সালে ২৮ লাখ ৬ হাজার ৯৬ জন, ২০১৮ সালে ২৭ লাখ ৭৭ হাজার। প্রত্যেক বছরই কিন্ত কমছে। এর মানে এই নয় যে, আমাদের ড্রপ আউট বাড়ছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী ড্রপ আউটের হার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ড্রপ আউট হয়নি, প্রকৃত যে তথ্য আমরা ড্রপ আউট কমিয়ে এনেছি।’
তাহলে মাদরাসার এবতেদায়ী শিক্ষার্থী কেন বেড়েছে- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রতিমন্ত্রী ও সচিব।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
প্রতি বছরের মতো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি জেলার পরীক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর ০২-৯৫৭৭২৫৭, ইমেইল- mopmesch2@gmail.com। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর ০২-৫৫০৭৪৯১৭, ০১৭১১৩৪৪৫৩২, ০১৭১২১০৬৩৬৯ ইমেইল- ddestabdpe@gmail.com। সমাপনী পরীক্ষা সংক্রান্ত সব তথ্য এ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা যাবে।’
পরীক্ষার বিস্তারিত সময়সূচি
প্রাথমিক সমাপনীতে ১৭ নভেম্বর ইংরেজি, ১৮ নভেম্বর বাংলা, ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২০ নভেম্বর প্রাথমিক বিজ্ঞান, ২১ নভেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং ২৪ নভেম্বর গণিত পরীক্ষা হবে।
ইবতেদায়ী সমাপনীতে ১৭ নভেম্বর ইংরেজি, ১৮ নভেম্বর বাংলা, ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং বিজ্ঞান, ২০ নভেম্বর আরবি, ২১ নভেম্বর কুরআন মজিদ ও তাজবিদ এবং ২৪ নভেম্বর গণিত বিষয়ে পরীক্ষা হবে।