শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::

এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে প্রতারক লিটন জড়িত না

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০
  • ২৩৯ বার পঠিত

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামের সিদ্দিক শিকদারের ছেলে সিকদার লিটন ওরফে টুটুল ওরফে সুমন। স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রতারক ও ছদ্মবেশী অপরাধী বলেই বেশি পরিচিত।

এলাকার মানুষকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক। একবার তার হাতে টাকা গেলে সেই টাকা কেউ ফেরত পেয়েছেন এমন নজির নেই। চাকরি তো দূরের কথা, টাকা চাইতে গেলে লিটন প্রাণনাশের হুমকি দিত। এসব অপরাধের অভিযোগে একাধিক মামলাও আছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা, নড়াইল, পাবনা, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় একেক সময় অবস্থান করে কখনও সাংবাদিক, কখনও বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের খুবই কাছের লোক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক সিকদার লিটন। যখনি কোন সমস্যা হত তখনই অবস্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়গা অবস্থান করতো এই প্রতারক। অবস্থান পরিবর্তন করে আবার শুরু করতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন- বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেয়ার আশ্বাসে দুই লাখ টাকা নেয় প্রতারক সিকদার লিটন। দুইবছরেও চাকরি কিংবা টাকা কিছুই ফেরত পাননি ভুক্তভোগী নাজমুল। টাকা চেয়ে দীর্ঘদিন লিটনের কাছে ধর্ণা দিলেও টাকা তো দূরের কথা এখন উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। গরু ও কিছু জমি বন্ধক রেখে লিটনের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন নাজমুল। বর্তমানে অসহায় হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এই যুবক।

ভুক্তভোগী নাজমুল বলেন, চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারক সিকদার দুই লাখ টাকা নেয় তার কাছ থেকে। কিন্তু আড়াই বছর হয়ে গেলেও তাকে চাকরি কিংবা টাকা কোনোটাই ফেরত দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনে (বিআইডব্লিউটিসি)তে চাকরি দেওয়ার কথা বলে লিটন দুই লাখ টাকা নেয়। সরকারি চাকরির চিন্তা করেই টাকা দিয়েছিলাম। ভাবলাম যদি চাকরিটা হয় তাহলে আমার জন্য ভালো হয়। এখন ফোন দিলে উল্টাপাল্টা কথা বলে। আবার অনেক সময় কল দিলে ধরে না। ওর (লিটনের) সঙ্গে আরও কয়েকজন লোক আছে ওর গ্রামের। তারা মিলে আমার মতো আরো অনেকের টাকা মেরে দিয়েছে।

লিটনের নামে কয়েকজনের কাছে অভিযোগ দিতে গিয়েছি, কেউ ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনে না। কারণ ওর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বললে ও (লিটন) সেগুলো রেকর্ড করে নেটে ছেড়ে দেয়। এজন্য কেউ কথা বলতে চায় না।

নাজমুল আরো বলেন, প্রতারক লিটন আলফাডাঙ্গা গ্রামে আসে না। আলফাডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে শুনি ওর নামে আরো বহু অভিযোগ রয়েছে। আমাকে থানার ওসি বলল সে তো (লিটন) গ্রামে আসে না। আসলে আমরা একটা ব্যবস্থা নিতে পারতাম।

চাকরির আশ্বাসে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক সিকদার লিটন। এভাবে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন তিনি। এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়িত না লিটন।

মুক্তিযোদ্ধা আ. হালিম মিয়া বলেন, বেশকিছু দিন আগের ঘটনা। তখন আমার মেয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে। জামাইসহ থাকত ঢাকার সাভারে। জামাই বেকার ছিল। হঠাৎ একদিন সিকদার লিটন ওদের বাসায় যায়। লিটন বলে, ভাই (জামাইকে) আপনার তো চাকরি-বাকরি নেই বেকার মানুষ দেখি একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি কি-না। এতে জামাই লিটনের কথায় আশ্বস্ত হয়। এ সময় লিটন চাকরির জন্য কিছু টাকা দাবি করে। কথা অনুযায়ী টাকাও দেওয়া হয়।’

মুক্তিযোদ্ধা হালিম মিয়া আরও বলেন, ‘টাকা নেওয়ার পর প্রতারক লিটন আমার জামাইকে বলে- দেখি ভাই আপনার মোবাইলটা একটু দেন। চাকরির খবর নিই। এই বলে মোবাইল নিয়ে বাইরে কথা বলতে বলতে বের হয়ে আসে। এরপর কোনদিন টাকা বা মোবাইল ফেরত তো দেয়নি চাকরিরও কোন ব্যবস্থা হয়নি।’

হালিম মিয়া বলেন, ‘এরপর আমি যখন চেয়ারম্যান নির্বাচন করলাম তখন ও (লিটন) আসলো। আমার সঙ্গে ৭-৮ দিন থাকলো। এরপর চলে গেল। টাকা চাওয়ার পরেও আর টাকা দেয়নি। এরপর থেকেই তো ফেরারি।’

এদিকে প্রতারক সিকদার লিটনের আরেক প্রতিবেশি সামীম শেখ বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির কথা বলে লিটন অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সে এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গেও জড়িত ছিল। স্থানীয়রা একদিন ক্ষিপ্ত হয়ে জোড়া মান্দার গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পরে মুরব্বিদের হাতে পায়ে ধরে রক্ষা পায়। এরপর থেকে এলাকা ছাড়া। কিন্তু তারপরেও দমেনি। এখনো বিভিন্ন জায়গায় শোনা যায় তার প্রতারণার গল্প।’

মুক্তিযোদ্ধা আ. হালিম মিয়া ও সামীম শেখ দুজনই সিকদার লিটনের প্রতিবেশি। তাদের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামে। পাশের বাড়ির প্রতিবেশি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই চেনেন প্রতারক লিটনকে। আর স্থানীয়দের কাছেও তিনি প্রতারক ও ছদ্মবেশি অপরাধী বলেই বেশি পরিচিত।

প্রতিবেশি সামীম শেখ বলেন, ‘এলাকা থেকে বিতারিত হবার পর পাবনা, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গা অবস্থান করেছে এই প্রতারক। সেখানেও মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এত অত্যাচার আল্লাহ সহ্য করলেও মানুষ সহ্য করে কেমন করে?’

‘কিছুদিন আগে নড়াইল থেকে একজন মহিলা এসে কান্নাকাটি করছিল। পরে জানতে পেরেছি লিটন তাকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে এক লাখ বিশ হাজার টাকা নিয়েছে। এমন অনেক খারাপ কাজে জড়িত লিটন।’

সামীম বলেন, স্থানীয় অনেক ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনায় লিটন জড়িত। আবার মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঘটনায় অনেকে এখনো তার বাড়িতে আসে। বাবা-মা মারা যাবার পরেও দাফন করতে এলাকায় আসতে পারেনি।’

উল্লেখ্য, সোমবার (১৯ অক্টোবর) ভোররাতে ভাঙ্গা উপজেলা সদরে থানার সন্নিকটে একটি ভাড়া বাসা থেকে সিকদার লিটনকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুর র্যাব-৮। পরে ডিজিটাল অ্যাক্ট আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার লিটন শিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় সিআইডির নিকট হস্তান্তর করা হয়। পরে প্রতারক সিকদার লিটনকে আদালতে তোলা হলে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

প্রতারক সিকদার লিটন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানা ধরনের প্রতারণার পাশাপাশি সাইবার অপরাধের সঙ্গেও জড়িত ছিলো । তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি মামলার চারটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এসব মামলায় সে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলো।

ফরিদপুর, খুলনা ও পাবনা জেলায় চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকি, সাইবার অপরাধসহ প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে। ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে অপপ্রচার করে ব্ল্যাকমেইলিং এবং গ্রামের সহজসরল অনেক মানুষের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণার অভিযোগে ডিজিটাল অ্যাক্ট আইনে দায়েরকৃত মামলার আসামি তিনি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com