র্যাবের হাতে আটক ডজনখানেক মামলার আসামি প্রতারক সিকদার লিটন দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের চার্জশিটভুক্ত মামলার আসামি। পাবনায় একজন ব্যবসায়ীর করা প্রতারণার মামলায় ‘অর্থ হাতিয়ে’ নেওয়ার প্রমাণ পায় সংস্থাটি।
দুদক বলছে, বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম, দালালি, প্রতারণা এবং মানুষকে ঠকিয়ে টাকা নেওয়াই ছিল লিটনের মূল কাজ। এভাবে অনেকের সঙ্গেই সে প্রতারণা করেছে।
এদিকে ভয়ংকর এই প্রতারকের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, সাইবার অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে ডজনখানেক মামলা রয়েছে। এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়িত নয় সিকদার লিটন। নিজের শ্বশুরের নামেও পাঁচটি মামলা করেছিলেন তিনি। কিছু অসৎ রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে লিটন একের পর এক অপরাধ কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চালিয়েছেন।
গত ১৯ অক্টোবর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসতে থাকে লিটনের বিভিন্ন অপরাধের ফিরিস্তি। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার চরডাঙ্গা গ্রামের সিদ্দিক সিকদারের ছেলে সিকদার লিটন স্থানীয় লোকজনের কাছে প্রতারক ও ছদ্মবেশী অপরাধী হিসেবে পরিচিত। তিনি এলাকার মানুষকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নিজেকে তিনি একটি পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘এ ধরনের প্রতারকদের শাস্তি থেকে পার হওয়ার সুযোগ নেই। এদের যথাযথ শাস্তি হওয়া জরুরি।’
২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি পাবনার আমিনপুর থানায় প্রতারক লিটনের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করেন ইন্দ্রজিত শীল নামের একজন ব্যবসায়ী। মামলাটির তদন্ত করে আমিনপুর থানা পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। মামলার বিবরণীতে বলা হয়, ঢাকায় সিকদার লিটনের সঙ্গে ব্যবসায়ী ইন্দ্রজিত শীলের সঙ্গে পরিচয় হয়। এ সময় লিটন কমিশনের মাধ্যমে পাবনা থেকে ভুসা মাল (ভুট্টা, চিনাবাদাম ও গম) সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা বলেন। এজন্য ব্যবসায়ী ইন্দ্রজিত শীলের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সাত লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন প্রতারক সিকদার লিটন। পরবর্তীতে ভুসা মাল বা টাকা ফেরত না দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় লিটন। এরপর থানায় মামলাটি করেন ওই ব্যবসায়ী। আমিনপুর থানা পুলিশ ছাড়াও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণার ধারা থাকায় মামলাটি তদন্ত করে দুদক। এছাড়া আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে সিআইডিও। তদন্ত শেষে আদালতে মামলার মূল চার্জশিট জমা দিয়েছে দুদক। যেখানে প্রতারক লিটনের অপরাধের প্রমাণ মিলেছে।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা (তৎকালীন দুদকের পাবনা জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক) মো. জালাল উদ্দিন আদালতে জানান, আসামি সিকদার লিটন ডাচবাংলা ব্যাংকের একাউন্ট ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে কোনো মালামাল ক্রয় করে না দিয়ে তার মোবাইল বন্ধ করে দেয়। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে লিটন কোনো ধরনের ব্যবসা করে না। বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম, দালালি, প্রতারণা এবং মানুষকে ঠকিয়ে টাকা নেওয়াই ছিল লিটনের মূল ব্যবসা। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আইনজীবী কোবাদ হোসেন বলেন, দুদকের চার্জশিটভুক্ত মামলায় কোনো আসামির খালাস পাওয়ার সুযোগ নেই। এসব মামলা থেকে বের হয়ে আসা খুব কঠিন। অপরাধের শাস্তি হবেই। সিকদার লিটনকেও তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে।
নানান অপরাধে অভিযুক্ত সিকদার লিটন কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিল না বলে জানিয়েছেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, সিকদার লিটন কোনোদিন আলফাডাঙ্গায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিল না। আমাদের জানা মতে সে আওয়ামী লীগবিরোধী পরিবারের সন্তান।
আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার বলেন, সিকদার লিটন একজন পেশাদার প্রতারক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষজনকে নিয়ে কুৎসা রটিয়ে টাকা আদায় করত। এছাড়া এলাকার অনেককে চাকরির আশ্বাস দিয়ে লিটন টাকা নিয়েছে।
আলফাডাঙ্গার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খান বেলায়েত হোসেন বলেন, সিকদার লিটন এলাকায় প্রতারক হিসেবেই পরিচিত। তিনি এলাকার অনেক সম্মানিত ব্যক্তিকে নিয়ে ফেসবুকে আজেবাজে কথা লিখেছেন। আমাকে নিয়েও একসময় লিখেছেন।
এ ব্যাপারে পাবনার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, মামলাটি অনেক আগেই তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এখন এটি বিচারাধীন আছে।
এদিকে প্রতারক লিটনকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় সিআইডি। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চায় সিআইডি। এসময় আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই মামলায় নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন লিটন। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন।