জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রামের পটিয়ার এমপি শামসুল হক চৌধুরীর রাজ্যে ভালো নেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও দলীয় অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। হুইপ ও তার পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী শারুনের অপকর্মের প্রতিবাদ কিংবা মতের অমিল হলেই শুরু হয় বাপ-ছেলের বাহিনীর মধ্যযুগীয় কায়দায় জুলুম নির্যাতন। দেওয়া হয় মামলা। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী কেউ বাদ পড়ছেন না তাদের রোষানল থেকে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম নবী বলেন, ‘শামসুল হক ও তার পুত্র শারুন পটিয়ায় আওয়ামী লীগ নিধনযজ্ঞ শুরু করেছে। প্রতিনিয়তই তাদের হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছেন আওয়ামী লীগ পরিবারের কেউ না কেউ। তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় আমাকে মোবাইল চুরির মামলা দিয়েছে। শারুন একাধিকবার নাজেহাল করেছে।’
পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘২০১৬ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে শামসুল হকের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তার দেওয়া মামলা ও হামলায় জর্জরিত আমি ও আমার পরিবার। শুধু আমার পরিবার নয়, পটিয়ায় যারাই তার মতের বিরুদ্ধে গেছে তাদের মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করছে।’ পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক জমির উদ্দিন বলেন, ‘শামসুল হকের জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান এবং এমপি নির্বাচনের জন্য মাঠ গোছানো সব কাজ সামনে থেকে করেছি। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর মতের অমিল হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে আমার বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা দিয়েছে। আমার তিন ভাই, চার ভাইপো, দুই ভাগ্নের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়েছে। হুইপের রোষানল থেকে বাদ যায়নি আমার ঘরের ৪ চাকর ও দুই সিএনজি ট্যাক্সিচালকও।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, পটিয়া আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নিজস্ব বলয় তৈরি করতে মনোনিবেশ করেন শামসুল হক চৌধুরী। এ সময় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের পরিবর্তে বিএনপি-জামায়াত থেকে নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন করতে থাকেন শামসুল হক। তার এ কর্মকান্ডের বিরোধিতা করেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিরোধ শুরু হওয়ার পর মামলা ও হামলার পথ অনুসরণ শুরু করেন শামসুল। গত পাঁচ বছরে হুইপ শামসুল হক ও তার পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী শারুন বাহিনীর হাতে হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে শত শত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী। তাদের অনেকে আবার জীবন বাঁচাতে এলাকা ছাড়া। দায়ের হওয়া মামলারগুলোর মধ্যে চুরি মামলা যেমন রয়েছে, তেমনি বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও মামলাও রয়েছে। অপকর্মের প্রতিবাদ করায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম নবীর বিরুদ্ধে দেওয়া হয় মোবাইল চুরি ও ৮ হাজার টাকা ছিনতাই মামলা। পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় মারামারি মামলা। পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক জমির উদ্দিনের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ ২৭টি। দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দেয় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা। পটিয়া উপজেলা কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু ছৈয়দ, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফু, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জামসেদ হিরু, পটিয়া পৌরসভার ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মীর আবদুল আউয়ালের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় গাড়ি ভাঙচুর মামলা। বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের আলমের ও অর্থ সম্পাদক মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় গাড়ি ভাঙচুর ও মারামারি মামলা। পটিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাইফুর আজম রুনেলের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় জ্বালাও-পোড়াও মামলা। পটিয়া পৌরসভা জাতীয় শ্রমিক লীগের সহসভাপতি সাইফউদ্দিন ভোলার বিরুদ্ধে দেওয়া হয় ভাঙচুর ও অপহরণ মামলা। হুইপ ও তার পুত্রের রোষানলে পড়ে মামলা থেকে বাদ যাননি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বজল আহমদ, মো ইসহাক, পটিয়া আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ কামাল, রবিউল হোসেন আপেল, মো ওবাইদুল্লাহ, পৌর আওয়ামী লীগের নেতা নোমান সরওয়ার দুলাল। নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ঘায়েল করতে মামলা দেওয়া হয়েছে নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নামেও। এমন ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে রয়েছে পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক জমির উদ্দিনের পরিবার। জমিরের ভাই মো রায়হান, আবদুর রহমান, ভাতিজা মো আসাদ, মো ইমরুল, মো. ইরাদকেও করা হয়েছে মামলার আসামি।