শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

ঢাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু, বাইরে কালাজ্বর

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১
  • ১৫৭ বার পঠিত

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : সব হাসপাতালেই এখন নির্দেশনা দেওয়া আছে, জ্বরের উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী এলেই করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু টেস্টও করতে হবে। সাধারণ মানুষের প্রতিও স্বাস্থ্য বিভাগ বারবার সচেতনতামূলক বার্তা দিচ্ছে, কভিড টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ এলে ডেঙ্গু টেস্ট করানোর জন্য। কিন্তু কোনো দিকেই তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ দেশে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে চলছে। বিশেষ করে রাজধানীতে হঠাৎ বেড়ে গেছে ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বুধবার ভোরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর একটি হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ২৯ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৮ জনই রাজধানীর। এ ছাড়া মোট ১৩১ জন রোগী সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ১২৮ জনই (৯৭ শতাংশ) ঢাকায়। বাকি মাত্র তিনজন ঢাকার বাইরে।

ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে থাকা ডেঙ্গু টেস্ট কিট ফুরিয়ে আসছে দ্রুত।

অন্যদিকে রাজধানীর কাছাকাছি কয়েকটি জেলায় দেখা দিয়েছে কালাজ্বরের প্রকোপ। গাজীপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে বেড়ে যায় কালাজ্বর। দুই বছর ধরে কালাজ্বরের বাহক বেলেমাছি নিধনে নেই কোনো কার্যক্রম। এবারও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুই শাখার ঠেলাঠেলিতে কেনা হয়নি প্রয়োজনীয় কীটনাশক।

ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কীটনাশকের চাহিদা দিয়েও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) কাছ থেকে কীটনাশক পায়নি।

একইভাবে এক লাখ ডেঙ্গু টেস্ট কিট কিনে দেওয়ার জন্য সিএমএসডিকে বলা হলেও সেটার অগ্রগতি নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি কালাজ্বরপ্রবণ এলাকায় একটি জরিপ করে দেখা গেছে আগের তুলনায় রোগী বাড়ছে। ওই জরিপের প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উপব্যবস্থাপক (ডেঙ্গু) ডা. আফসানা আলমগীর খান বলেন, ‘আমাদের হাতে এখন মাত্র ৫০ হাজার কিট আছে। আরো এক লাখ কিট চাওয়া হয়েছে সিএমএসডির কাছে। সেটা জুলাইয়ের শেষ নাগাদ পাওয়া যেতে পারে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’ যদিও ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ছাড়াও হাসপাতালগুলো নিজেরাও প্রয়োজন অনুযায়ী কিট কিনতে পারে।’

অন্যদিকে দুই বছর ধরে কালাজ্বরের বাহক বেলেমাছি নিধনে কীটনাশক ডেল্টামেথ্রিন কিনতে পারছে না রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। এবারও ৫০ হাজার লিটার কীটনাশকের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত জুনের শেষ সময় পর্যন্ত নানা গড়িমসির কারণে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও সিএমএসডির ঠেলাঠেলিতে তা কেনা হয়নি। ফলে কালাজ্বরপ্রবণ এলাকায় এখন কীটনাশক ছিটাতে পারছে না রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।

রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সিএমএসডি থেকে ডেঙ্গু কিট দ্রুত সময়ের মধ্যেই পাব বলে আশা করছি। ডেল্টামেথ্রিন কেনার জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করবে বলে জানানো হয়েছে।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আগেও সব হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্টের জন্য বলেছি। কিন্তু অনেকেই সেটা করে না। ফলে আবারও সব হাসপাতালে চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়া রোগীদের উচিত জ্বরের উপসর্গ থাকলেই শুধু কভিড নয়, ডেঙ্গু টেস্টও করা।’

গত জুন মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডেই পাওয়া যাচ্ছে এডিস মশা। কোথাও কোথাও এডিসের ঘনত্ব বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গবেষণার এই তথ্য এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পর্যালোচনা করে গবেষকরা বলছেন, জুলাই ও আগস্টে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘এডিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো, রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখা, বিভিন্ন স্থানে জমা পানি ফেলে দেওয়াসহ আমাদের অনেক কার্যক্রম চলমান। স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরে আমাদের বিশেষ অভিযান এবং চিরুনি অভিযানগুলো চলে। লকডাউনে আমাদের কোনো মশককর্মী বসে থাকবে না—এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে যেসব রোগী পাওয়া যাচ্ছে, হাসপাতাল থেকে তাদের ঠিকানা নিয়ে তাদের বাড়ির আশপাশের ৪০০ গজের মধ্যে আমরা আলাদা করে ওষুধ ছিটিয়ে আসছি।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। তবে যেসব স্থানে মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে তার অর্ধেকই বাড়ির ভেতরে। ফলে আমরা ভবন মালিক সমিতিকে যুক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি মনে করি, ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন না হলে শুধু সিটি করপোরেশনের পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com