ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ ও জাতীয়ভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল। একইসঙ্গে করোনা মোকাবিলায় সরকারকে সাতটি উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানান তারা।
শনিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় এক যুক্ত বিবৃতিতে দলটির প্রধান দুই নেতা এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছে। বিশ্ব অর্থনীতিও গভীর সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। সরকারের স্বীকৃতি অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন মৃত্যুবরণ করেছে। এই নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে কতগুলো দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।
করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে সাকি ও রুবেল বলেন— যেসব দেশ আগাম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেসব দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিম্ন পর্যায়ে আছে। কাজেই এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে সংক্রমণ যে পর্যায়ে আছে, তাতে আমরা যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি— তাহলে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। তাই অবিলম্বে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা দরকার। অন্যান্য দেশে দেখেছি, জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে তারা সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে। আমাদের দেশেও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এবং এরসঙ্গে সরকারি কার্যক্রম বাদে সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা দরকার।
শিল্প-কল কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, জনসমাগম বন্ধ করে দেওয়া উচিত মন্তব্য করে তারা আরও বলেন— চলমান নির্বাচনগুলো স্থগিত করতে হবে। মানুষকে নিজ গৃহে থাকতে বলার নির্দেশনাটি ব্যাপকভাবে কার্যকর করা দরকার। কেননা, নিজ গৃহে থাকলেই কেবল মাত্র সংক্রমণকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। ফলে তা বাস্তবায়ন করতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অর্থাৎ সেনা বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকে পর্যাপ্ত মোতায়ন করতে পারলে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার খবর গণমাধ্যমে এসেছে বলে উল্লেখ করে এই নেতারা বলেন, বিশেষভাবে বিদেশ থেকে আগত প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার অব্যবস্থাপনার বিষয়টি। ভাইরাস সংক্রমণের শনাক্তকরণের ‘কিট’ সংগ্রহের অপ্রস্তুতি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আতঙ্ক দূর করতে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশে সব হাসপাতালগুলোকে করোনা সশনাক্তকরণের জন্য প্রস্তুত করার দাবি জানিয়ে তারা আরও বলেন, হাসপাতালগুলো যাতে পরীক্ষা করতে পারে সে উদ্যেগ নেওয়া দরকার। করোনা সংক্রমণ সশক্ত হলেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি ও ডাক্তার-নার্সদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকলে দ্রুততম সময়ে বন্দোবস্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
গার্মেন্টসহ শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হলে জরুরি অবস্থাকালীন শ্রমিকদের বেতনের নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে বলে উল্লেখ করে সাকি ও রুবেল বলেন, যে অর্থনৈতিক সংকট আসছে সেটাকে মোকাবিলায় শিল্প কলকারখানাকে বিনা সুদে ঋণ দিতে হবে।
সরকারকে তথ্য গোপন না করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, ইতোমধ্যেই কিছুটা বিলম্ব হয়ে গেলেও বাস্তবতা কী জনগণের সামনে তা পরিষ্কার করুন। ইউরোপের বহু দেশও স্বীকার করেছে যে, তারা দেরিতে সাড়া দিয়েছে, সামাজিক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বার মতোই করোনার বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধে নেমেছে। তথ্য গোপন করলে একদিকে বিপদ বাড়বে, অন্যদিকে গুজবের জন্ম হবে, যা এই পরিস্থিতিতে আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।