বিনোদন ডেস্ক: ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। বর্তমানে বেলবিউ হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর প্রকাশ করেছে।
ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রোববার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে বেলবিউ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছে, তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। ভেন্টিলেশনও দেওয়া হতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থা একই রকম রয়েছে। তার মধ্যে কিছুটা মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল সৌমিত্রের ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করা হলে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ ছাড়া সংক্রমণ ধরা পড়ে তার মূত্রনালিতেও। গতকাল গভীর রাতে জ্বরের পাশাপাশি তার অস্থিরতা বেড়েছে।
শনিবার (১০ অক্টোবর) রাতে সৌমিত্রকে দুই ইউনিট প্লাজমা দেওয়া হয়েছিল। গতকাল আরো এক ইউনিট প্লাজমা দেওয়া হয়।
বেলবিউ হাসপাতালের সিইও জানান, গত বছর গুরুতর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সৌমিত্র। এসব বিষয় মাথায় রেখেই চিকিৎসার পদক্ষেপ ঠিক করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ১০ জন ছাড়াও আরো ৬জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন।
করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ দিন টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির শুটিং বন্ধ ছিল। সতর্কতা মেনে সম্প্রতি শুটিংয়ের অনুমতি মেলে। যথাযথ সুরক্ষা মেনে শুটিংয়ে ফিরেছিলেন সৌমিত্র। নিজেকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্রের শুটিং করছিলেন। এর মধ্যে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। গত ৬ অক্টোবর ৮৫ বছর বয়েসি এই শিল্পীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। চ্যাটার্জি পরিবারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্রর দাদার আমল থেকে চ্যাটার্জি পরিবার নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে বসবাস শুরু করেন। সৌমিত্র পড়াশোনা করেন—হাওড়া জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতার সিটি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৫৯ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সৌমিত্র। মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। কবি ও খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকার হিসেবে তার দারুণ খ্যাতি রয়েছে।
২০১২ সালে ভারতের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ পান তিনি। তাছাড়া ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মাননা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো—ফ্রান্সের ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ (২০১৮)।