আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অসহনীয় মাত্রার বায়ুদূষণে নগরবাসীর জীবন বিপর্যস্ত। তাই শহরটির ৪০ শতাংশ বাসিন্দা স্থায়ীভাবে দিল্লি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চাচ্ছেন। এছাড়া অন্তত ১৬ শতাংশ বাসিন্দা এমন জরুরি অবস্থায় শহরের বাইরে থাকতে চান। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
রাজধানী দিল্লিতে বসবাসরত ১৭ হাজার মানুষ সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। দীপাবলি এবং তৎপরবর্তী সময়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। বায়ুদূষণে দিল্লির ভয়াবহ পরিস্থিতি দিন দিনি আরও জটিল হচ্ছে। শনি ও রোববার শহরের বেশকিছু স্থানে বাতাসের গুণমান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৯৯৯ ছাড়িয়েছে।
এমন অবস্থায় লোকাল সার্কেল নামক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম দিল্লির ১৭ হাজার বাসিন্দার ওপর চালানো সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য। এছাড়া ৩১ শতাংশ বাসিন্দা এয়ার পিউরিফায়ার বা মাস্ক পরে হলেও দিল্লিতে থেকে যাওয়ার পক্ষে। প্রয়োজনে আরও গাছ লাগানোর কথাও বলছেন তারা।
কয়েক দিন ধরে দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত পরিবেশ দূষণ (প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর্তৃপক্ষ জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। নগরীর স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সমীক্ষায় রাজধানীর নাগরিকদের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ১৩ শতাংশের বেশি নাগরিক ইতিমধ্যে শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে গেছেন। ২৯ শতাংশ ব্যক্তি হাসপাতালে গেছেন একাধিকবার। ৪৪ শতাংশ মেনেই নিয়েছেন তারা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন কিন্তু এখনও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
রোববার দুপুরে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ৪৮৬। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আজ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে জোড়-বিজোড় নীতি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ গাড়ির নম্বর প্লেটের শেষ সংখ্যাটা যাদের জোড় তারা আজ দিল্লির রাস্তায় বেরোনোর সুযোগ পেলে কাল পাবে বিজোড়।
গত বুধবার প্রকাশিত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, ৪২২ স্কোর নিয়ে দিল্লি এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। প্রতি বছরই দীপাবলি উৎসবের পর দিল্লির বায়ুদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে। এবারও তাই হওয়ায় দিল্লিতে জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা জারি করে শহরের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
ভারতের পরিবেশ দূষণ পরিমাপক কর্তৃপক্ষ (ইপিসিএ) জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী নয়াদিল্লির বায়ুদূষণ সিভিয়ার প্লাস বা চরম জরুরি পর্যায়ে উন্নীত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারির পর দিল্লির আকাশ এতটা বিষাক্ত এই প্রথম হলো।
দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা সিভিয়ার প্লাস হওয়ায় পাবলিক হেলথ্ এমার্জেন্সি জারি করে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে আগামীকাল রাজধানী দিল্লির সব স্কুল বন্ধ থাকবে। এছাড়া আশপাশের এলাকায় সবরকম নির্মাণকাজও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে তারা।
সাধারণত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ০ থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল বলে ধরা হয়। কিন্তু দীপাবলির বাজির কারণে বিষাক্ত গ্যাসে দিল্লির গড় একিউআই বেড়ে তা ৫০০ ছুঁই ছুঁই করছে। তাই দিল্লিতে ঘর থেকে বের হলে চোখ জ্বলছে, শুরু হচ্ছে প্রবল কাশি।
রাজধানী শহরের এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি কোম্পানি তাদের কর্মচারীদের ঘরে বসে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে। ইপিসিএ বলছে, ভয়াবহ এই দূষণ আমাদের সবার বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে ৫০ লাখ মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যধিক হওয়ায় দিল্লিকে ‘গ্যাস চেম্বার’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
শুক্রবার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করতে গিয়ে মুখমন্ত্রী কেজরিওয়াল দিল্লিকে গ্যাস চেম্বার হিসেবে অভিহিত করেন। স্কুল বন্ধ রাখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যেকোনো ধরনের আউটডোর গেম থেকে বিরত রাখার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
তিনদিন আগে প্রকাশিত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তানের লাহোর এবং তৃতীয় স্থানে আছে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ১৬৭ স্কোর নিয়ে আছে তালিকার চতুর্থ স্থানে।