নিউজ ডেস্ক: ক্রিকেট পাগল জাতির তালিকা করলে বাংলাদেশের নাম শীর্ষেই থাকার কথা। ক্রিকেট এখানে কেবল একটি খেলা নয়; বরং তুমুল আবেগের জায়গা। বাংলাদেশে ক্রিকেট হলো ভালোবাসার আরেক নাম, লাল-সবুজ পতাকার সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড। সম্প্রতি এই সত্যের এক বড় উদাহরণ হয়ে এসেছে এক মা ও তার ছেলের ক্রিকেট খেলার কয়েকটি অনিন্দ্য সুন্দর ছবি, যা বিখ্যাত বানিয়ে দিয়েছে তাদের।
মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবালরা মাঠে নামলে গোটা দেশ ক্রিকেট জ্বরে কাঁপে। গ্যালারিতে ওঠে উল্লাসের ঢেউ। চায়ের দোকান কিংবা ইলেকট্রনিক্স দোকানের সামনে তৈরি হয় জটলা। ঘরে-বাইরে চলে প্রার্থনা। পুরো বাংলাদেশ মেতে ওঠে আনন্দে।
ক্রিকেট যেখানে নাওয়া-খাওয়া সেখানে ১১ বছর বয়সী শেখ ইয়ামিন আহমেদ সিনান ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখবেন সেটাই স্বাভাবিক। আর সেই স্বপ্ন পূরণে বাবা-মাকে পাশে পাওয়া গেলে তো কথাই নেই।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে মা ও ছেলের ক্রিকেট প্রেমের অভূতপূর্ব কিছু মুহূর্ত। ছেলে সিনান মাকে বোলিং করছে, মা ঝর্ণা আক্তার চিনি দিব্যি ব্যাটিং করছেন। মাকে আউট করে ছেলের উদযাপন ও মায়ের বোলিংসহ আরো কিছু ছবি ক্রিকেটপ্রেমিদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। দারুণ সেই ছবিগুলোর প্রতি প্রত্যেকেই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন।
সিনানের বাবার খেলার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। ছেলেকে বেশ উৎসাহ দেন। কিন্তু কাজে ব্যস্ত থাকায় ছেলেকে সময় দেওয়া হয় না। শুক্রবার খানিকটা অসুস্থবোধ করায় ঘরে বিশ্রামে ছিলেন। কিন্তু মা ঝর্ণার আগ্রহ বাবার থেকেও বেশি। বলা যায়, ‘ক্রিকেট পাগল।’ সুযোগ পেলেই মা ও ছেলে মেতে ওঠেন ক্রিকেট আনন্দে।
পল্টন ময়দানে শুক্রবার সকালের ঘটনা প্রায়ই ঘটে ঝর্না ও সিনানের জীবনে। ঝর্না খুব আগ্রহ নিয়ে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমরা মা-ছেলে বাসার সামনে সব সময় ক্রিকেট খেলতাম।’ আর গতকালের ঘটনা মনে করে বলেন, ‘এখানে স্যার বলেছিলেন, জুমাআর নামাজ শেষে আসার জন্য। কিন্তু বাচ্চার তর সইছিল না। এজন্য সে চলে আসে আমাকে নিয়ে।’
“ওখানে বেসবল খেলা চলছিল (পল্টন ময়দানে চলছিল ওয়ালটন চতুর্থ জাতীয় মহিলা বেসবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল)। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর আমরা ক্রিকেটের অনুশীলনের জোনে চলে আসি। জায়গাটা ফাঁকা থাকায় ছেলে বলে, ‘চলো মা আমরা খেলি। তোমাকে আউট করতে পারলে আমি ব্যাটিং। আমাকে আউট করলে তুমি ব্যাটিং।’ এভাবেই মা-ছেলে ক্রিকেটানন্দে মেতে উঠি।”
মা ও ছেলের ৩০ মিনিটের ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ছবি মুহূর্তে ক্যামেরাবন্দী করেন ফটোজার্নালিস্টরা। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে যায় বিশ্বজুড়ে। ক্রিকেটপ্রেমিদের টাইমলাইনে।
আরামবাগের এক মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া সানিনকে নিয়ে বড় স্বপ্ন মায়ের। বুক ভরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে দুইটা স্বপ্ন দেখি। প্রথম স্বপ্ন আমার ছেলে কোরআনে হাফেজ হবে। দ্বিতীয়, আমার ছেলে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হবে। একদিন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলবে।’
সিনানদের পরিবার চারজনের। বাবা ও মা বাদে রয়েছে বড় বোন। ছেলেকে মাঠে নিয়ে আসার পাশাপাশি মাকে সামলাতে হয় সংসার। এজন্য করতে হয় অক্লান্ত পরিশ্রম। তবে পরিশ্রমের কোনো কষ্ট নেই বললেন মা ঝর্ণা, ‘মাঠে আসতে আমার অনেক কষ্ট হয়। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার পর আবার ছেলের ক্রিকেট খেলা। সংসারও আছে। তবুও আমার কোনো কষ্ট নেই। মা’রা সব পারেন।’