মেহেরপুরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। অল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের কারণে চাষিরাও ঝুঁকছেন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের দিকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারি-৫ জাতের নতুন উদ্ভাবিত এ জাতের পেঁয়াজ চাষ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের পেঁয়াজের ঘাটতিও দূর করা সম্ভব। অসময়ে এই পেঁয়াজ চাষে একদিকে যেমন পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণ হবে। অন্যদিকে আর্থিক ভাবেও সমৃদ্ধ হবেন কৃষকরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে এ বছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। যা মেহেরপুরে কৃষকদের জন্য আসার আলো হয়ে এসেছে। অল্প সময়ে অধিক মুনাফা ও উচ্চ ফলনশীল এই পেঁয়াজের কারণে এ বছর চাষিদের মুখে নতুন করে হাসি ফুটে উঠবে। পেঁয়াজের ঘাটতি কমাতে সারাদেশের মতো মেহেরপুর জেলায় ১৭শ কৃষককে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য সরকারিভাবে বিনামূল্যে বীজসহ নানা উপকরণ প্রণোদনা দেওয়া হয়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ইসাখালি গ্রামের পেঁয়াজ চাষি ইদ্রিস আলী জানান, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করেছেন তিনি। প্রতি বিঘা পেঁয়াজে খরচ পড়বে ৪০ হাজার টাকা করে। এ হিসেবে ৩ বিঘা জমির পেঁয়াজ চাষ করতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মতো খরচ হবে। তিন বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে কম করে হলেও ৬ লাখ টাকা আয় হবে।
একই এলাকার পেঁয়াজ চাষি আব্দুল কুদ্দুস হোসেন জানান, গত বছর তিনি পরীক্ষামূলক ১০ কাঠা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। যা থেকে তিনি ৫০ মণ পেঁয়াজের ফলন পেয়েছিলেন। এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের চাইতে এ বছর পেঁয়াজের অবস্থা খুবই ভালো।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সাঈদ হোসেন বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এটি মাত্র ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়। ফলে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উঠানোর পর আবারো সেই জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজের আবাদ করা যায়। এ কারণে দিন দিন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা।
জেলার গাংনী উপজেলার হাড়িয়াদহ গ্রামের পেঁয়াজ চাষি কাউছার আলী জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রতিটি মাঠেই খুব ভালো অবস্থানে আছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ।
মেহেরপুর সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বলেন, পেঁয়াজের ঘাটতি কমাতে সরকার গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। এ বছর মেহেরপুরে প্রচুর পরিমাণে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। মাঠের পেঁয়াজের অবস্থা খুবই ভালো। তবে শেষ মুহূর্তে এসে যেন কোনো রোগ-বালাই না হয়, সেজন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব মতে, চলতি মৌসুমে জেলার ৩ উপজেলার ২৩০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ টন। সে হিসেবে চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৯শ টন পেঁয়াজের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। প্রতি টন পেঁয়াজের আনুমানিক বাজার মূল্য ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে ১২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার পেঁয়াজ উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, চাষিদের প্রণোদনা দিয়ে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করা হচ্ছে। পেঁয়াজের উৎপাদন যাতে ভালো হয়, তার জন্য কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের এই মহতি উদ্যোগ যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। জেলা ও উপজেলা থেকেও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।