সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

ভারতীয়রা তিস্তা চুক্তি নিয়ে যা ভাবেন

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯
  • ২১৫ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সালের পর থেকে তিস্তার পানি নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের কোনো চুক্তি নেই। একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। ফলে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় পানি সংকট চলছে।

২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা পানি চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। তখন ঢাকা আসার কথা ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরও। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত আসেননি, তাই তিস্তা চুক্তিও হয়নি। ২০১৫ সালে একাই ঢাকায় এসেছিলেন মমতা। তবে ঢাকায় বসেই তিনি তিস্তার পানি দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

চার দিনের সফরে ভারতের উদ্দেশে আজ ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ভারত সফরে তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশ সরকারের ধারণা, তিস্তার পানি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সদিচ্ছা রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মমতা ব্যানার্জিকে কি এবার রাজি করাতে পারবেন তিনি?

প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখায় মোদি সরকার। কিন্তু ভারতের আইন অনুযায়ী, কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না, রাজ্যের অনুমোদনও লাগবে। এবার দ্বিতীয় দফায় মোদি সরকার আরও শক্তিশালী এবং মমতা ব্যানার্জি আগের চেয়ে দুর্বল বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ।

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভাবছেন ভারতের মানবাধিকারকর্মী, সমাজসেবী, লেখক, বুদ্ধিজীবী মহল। তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, তিস্তার পানি নিয়ে মমতা ব্যানার্জির যে অবস্থান সেটা মূলত তার ‘ইগো’র লড়াই। পানিবণ্টন নিয়ে অনেকে মমতার পক্ষে মত দিয়েছেন, কেউ আবার ভারতের মতো বাংলাদেশেরও তিস্তার পানি পাওয়ার অধিকার আছে বলে মনে করছেন।

কবি ও সমাজসেবী সুস্মিতা সর্বাধিকারী বলেন, ভারতের যে যে রাজ্যের ওপর দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তিতে সেই রাজ্যগুলোর স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে আন্তর্জাতিক স্তরে চুক্তিবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। তা না হলে অন্যান্য পানিবণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে ভারত যে শিক্ষা পেয়েছে, এক্ষেত্রেও তা-ই হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অবস্থান সাধুবাদের যোগ্য।
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্তা মলয় হালদার বলেন, নদীর গতিপথ যখন প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হতো, তখন কোনো দেশের একক সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সহজ হতো না। এখন ভাটির দেশকে নির্ভর করতে হয় উজান দেশের মনোভাবের ওপর। তিস্তার পানি যেমন ভারতের, তেমনি বাংলাদেশেরও। শুধু উত্তরবঙ্গের কথা বলে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বকে বলি দেয়া সমীচীন নয়।

একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী পাপন মালাকার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কোথায় যেন আত্মার টান অনুভব করি। আমরা পানি অপচয় করব আর প্রতিবেশী দেশের ভাই-বোনেরা পানির অভাবে কষ্ট পাবে, এটা মন থেকে মেনে নিতে পারি না। তবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন।

চাকুরিজীবী কমলিকা ভট্টাচার্য বলছেন, তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই ধরনের নদীতে কোনো একটি দেশ বা রাজ্যের একচ্ছত্র অধিকার থাকে না। সিকিম থেকে গজলডোবা পর্যন্ত তিস্তার ওপর বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণের কারণে বাংলাদেশের রংপুর-রাজশাহী অঞ্চল মরুর চেহারা নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে নদী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শুকনো মৌসুমে দুই দেশের মধ্যে সমবন্টনের নীতি গ্রহণ করা উচিত।

সমাজসেবী অসীম দাস বলেন, নদীর পানি আটকে রাখার চেষ্টা, নিজের অধিকারের এখতিয়ার বলে মনে করা নেহাৎ মুর্খামি। ভারত বা বাংলাদেশ উভয়েই কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিকাজ না হলে দুর্ভিক্ষ নেমে আসবে। বাংলাদেশকে তিস্তার পানি না দিয়ে ভারত যদি শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ দেখে, তাহলে ভবিষ্যতে নেপাল যদি ভারতকে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি দিতে অস্বীকার করে, কী হবে তখন?

বনশ্রী কোনার নামে এক নারী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ‘ইগো’ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনটা কখনওই কাম্য নয়। দেশ তথা সার্বিক স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত।

একটি প্রকাশনী সংস্থার কর্মী অভিজিৎ চ্যাটার্জি। তিনি বলেন, তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি হোক বা না হোক, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের রাজ্যে রাজনীতি করতেই হবে। তাই তাকে রাজ্যবাসীর স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করতে হয়। নদীর পানিতে কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ না রেখে উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশকে পানি দেয়ার মধ্যে কোনো মহত্ব নেই। বরং সবার আগে রাজ্যবাসীর দিকে তাকানো উচিত।

কলেজ শিক্ষক মানবেন্দু সরকার বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আসছেন। তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করে প্রাথমিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর এটাই উপযুক্ত সময়। হাসিনা চাইছেন, নরেন্দ্র মোদি চাইছেন। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীও চাইছেন। বেঁকে বসেছেন মমতা ব্যানার্জি। এটা সৌহার্দ্যের ছবি নয়। ভুল বার্তা যাচ্ছে।

কলেজছাত্রী রাখী বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তাচুক্তি নিয়ে আলোচনা চললেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে তিস্তার পানির দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। মমতা ব্যানার্জিকেই ঠিক করতে হবে, উনি রাজনীতি করবেন, নাকি দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com