নিজস্ব প্রতিবেদক: দৈনিক অন্যদিগন্ত’র অঙ্গীকারনামা পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীগণ বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত, ডিএফপি তালিকাভুক্ত দৈনিক অন্যদিগন্ত পত্রিকা পরিবারের সদস্য। আমরা সরল বিশ্বাসে কারো কোনো চাপ বা প্ররোচনা ছাড়াই এই মর্মে অঙ্গিকার করছি যে, স্ব স্ব পদে দায়িত্ব পালনকালে আমরা আর কখনো অনুসন্ধানী তথ্য নির্ভর কোন প্রতিবেদন তৈরি করবো না এবং তা আমাদের পত্রিকায় প্রকাশ করবো না। সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত, ছবি, ভিডিও, পর্যাপ্ত স্বাক্ষী-প্রমান থাকলেও আমরা সেসব প্রকাশ ও প্রচার করা থেকে বিরত থাকবো। তা যতই জনস্বার্থ বিষয়ক হোক, যতই দেশের কল্যাণকর হোক।
সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে আমরা আরো অঙ্গিকার করছি যে, ভুল-ভ্রান্তি, অসতর্কতায় কখনো সরকারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে ফেললেও কোনভাবেই আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপক্ষে একটি শব্দও রচনা করবো না। সরকারি স্কুলের নাইটগার্ড-পিয়ন থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যন্ত যে কেউ সংক্ষুব্ধ হন, বিরক্ত বোধ করেন কিংবা তাদের পরিবার পরিজন সামান্যতম অস্বস্তিবোধ করেন-এ ধরনের সকল কর্মকান্ড পরিহার করা আমাদের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মেনে চলবো।
সুপ্রিয় পাঠক সমাজের নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনাদের প্রিয় পত্রিকা দৈনিক অন্যদিগন্ত’র অস্তিত্বটুকু রক্ষায় এবং পত্রিকাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সাংবাদিকদের প্রাণ বাঁচাতে আমাদের এ অঙ্গিকার পালনে সাহায্য করুন।
মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব যে এত বেশি পাওয়ারফুল তা আমাদের ধারণা ছিল না। এ ধারণা ছিল না বলেই আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিরাট ক্ষমতাধর সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে ‘গাঁজায় আসক্ত এক সচিবের কান্ড’ শিরোনামে তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের দু:সাহস করেছিলাম। এরপর পাঠকদের চাহিদা আর তাগিদে উচ্ছ্বসিত হয়ে ‘সেই সচিবকে ঘিরে তোলপাড়’, ‘সচিব প্রসঙ্গে অন্যদিগন্তর চ্যালেঞ্জ’ ‘বাধ্যতামূলক ছুটিতেই সচিবকে বিদায়?’ শিরোনামে একের পর এক প্রতিবেদন ছাপাতেই প্রচন্ড ঝাঁকুনি টের পেলাম। সরাসরি হত্যা হুঁমকির মুখে পড়েন অন্যদিগন্ত’র সাংবাদিকরা। একদিকে পত্রিকার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জে আয়োজন করা হয় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনের, অন্যদিকে কয়েক লাখ টাকায় ভাড়া করা হয় জিসান গ্রুপের চিহ্নিত কিলারদের। একইসাথে ডিএফপিতে আটকে দেয়া হয় অন্যদিগন্ত’র সার্কুলেশন সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি। অদৃশ্য ইশারায় বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকার বিজ্ঞাপন রেট বৃদ্ধির প্রক্রিয়া। এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসন দফায় দফায় অন্যদিগন্ত’র ফাইল তলব, প্রকাশককে ডেকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হয়রানির কর্মকান্ডও চলতে থাকে। আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপকে লেলিয়ে দেওয়া হয় ছাপাখানা এলাকায়। আমাদের রিপোর্টার্স টিমের সব সদস্যের ইমেইল, ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে সব ডাটা মুছে ফেলা হয়েছে। অন্যদিগন্ত নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশনার ক্ষেত্রে একটার পর একটা বাধা সৃষ্টি আর উপুর্যপরী হুঁমকিতে আমরা এখন পুরোপুরি বিপর্যস্ত।
সত্যি সত্যিই আমরা ভয় পেয়েছি, সচিব মহোদয়ের লম্বা হাতের সীমাহীন প্রতাপে আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমরা আবারো শপথ করছি : ‘কখনো বলবো না দেশে সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করা হয়, কখনো লিখবো না প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অনিয়ম-দুর্নীতি করেন, চাকরিবিধি লংঘন করেন।’
তবুও টিকে থাকুক দৈনিক অন্যদিগন্ত, পত্রিকাটিতে সম্পৃক্তরা বেকার না হোক।
সম্পাদক
দৈনিক অন্যদিগন্ত।
০১৫১১৯৬৩২৯৪