মোসারাত জাহান মুনিয়া আত্মহত্যা মামলার তদন্তে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। বিশেষ করে এই মামলার বাদী নুসরাতের মোটিভ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের মধ্যে। কেননা বাদীর বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে বেরিয়ে আসছে অসংলগ্নতা। মোটা দাগে মুনিয়ার আত্মহত্যা নিয়ে করা মামলার ক্ষেত্রে নুসরাতের পাঁচটি ভুল চিহ্নিত হচ্ছে তদন্তে। তাই প্রশ্ন উঠেছে নুসরাতকে কেন অফিসিয়ালি এখনও জেরা করা হচ্ছে না?
এদিকে, মুনিয়ার আত্মহত্যাকে ঘিরে এ পর্যন্ত নুসরাতের কোনো কথারই মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিডিয়ার সামনে তার একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্যে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারাও রীতিমত অন্ধকারে পড়েছেন।
মুনিয়ার আত্মহত্যা নিয়ে অপমৃত্যুর মামলাটি তদন্ত করছে গুলশান থানার পুলিশ। এই মামলার বাদী মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত। তদন্ত করতে গিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ায় এখন মামলার পেছনের মোটিভ মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তদন্তকারীর কাছে।
তদন্তে দেখা যাচ্ছে, নুসরাত নির্মোহভাবে এবং ন্যায়বিচার প্রত্যাশী হয়ে মামলাটি করেননি, বরং মামলা করতে গিয়ে পক্ষপাত ছিল তার। আইনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কিছু তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, মুনিয়ার আত্মহত্যা নিয়ে করা মামলার ক্ষেত্রে নুসরাত কয়েকটি ভুল করেছেন এবং এই ভুলগুলোর সবই ধরা পড়েছে বিভিন্ন জায়গায় তার কথাবার্তায়; একটি কথার সঙ্গে আরেকটি কথার অসামঞ্জস্যের কারণে।
মুনিয়ার লাশ নামানো নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য, বাড়িভাড়া নিয়ে বিভ্রান্তি, অতিউৎসাহী হয়ে অসংলগ্ন বক্তব্য, মুনিয়ার অতীত নিয়ে মিথ্যাচার ও একজনকে অভিযুক্ত করার টার্গেট- এমন পাঁচটি ভুল তদন্তে সামনে আসছে।
নুসরাতের বক্তব্য, এই ঘটনার সময় তার ব্যবহার করা গাড়ি, সেই দিন সঙ্গে থাকা লোকজন, মুনিয়াকে কেন বনানী, গুলশানে বারবার দামি বাসায় রাখতে নিজের নামে ভাড়া নেওয়া, তার চলাফেরা, বিভিন্ন স্তরের যোগসূত্রিতা নতুন নতুন রহস্যের জানান দিচ্ছে। তার প্রতিটি তথ্য আর কথাবার্তাই অসংলগ্ন। তিনি একদিকে তথ্য গোপন করে চলছেন, অন্যদিকে অসত্য তথ্য প্রকাশ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বারবার ধাধায় ফেলে দিচ্ছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নুসরাত মূলত বিশেষ কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে নির্দ্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে নানাবিধ বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি আড়াল করতে চান গত মুনিয়ার গত ৬ বছরের নানা ঘাটে যাওয়া, চলচ্চিত্রের বারো রকমের মানুষের সাথে মেশা, অভিজাত পাডায় চলা, পাঁচ তারকা হোটেলে পার্টি করা, রাত কাটানোর বিষয়গুলো।
এদিকে, পুরো মামলায় একটি উদ্দেশ্য দেখা যায়- একজনকে অভিযুক্ত করা এবং তাকে টার্গেট করা। মুনিয়ার মৃত্যুর সময় নুসরাত ঘটনাস্থলে ছিলেন না, নুসরাতের সঙ্গে মুনিয়ার কথাবার্তা হয়েছে স্বাভাবিক মানুষের মতো এবং কখনো মুনিয়া কোনো রকম উত্তেজনাকর ও হতাশাজনক কোনো কথাবার্তা বলেননি নুসরাতের বক্তব্য অনুয়ায়ী। তাহলে আত্মহত্যার ঘটনায় হঠাৎ একজনকে অভিযুক্ত করলেন কেন? কুমিল্লা থেকে এসে তিনি লাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে বুঝলেন আত্মহত্যার প্ররোচনাকরী ওই ব্যক্তি? তিনি কি তাহলে অন্য কারও ইন্ধনে বা কাউকে খুশি করতে এই মামলা করেছেন- এই প্রশ্ন এখন তদন্তে সামনে চলে আসছে।
অন্যদিকে, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার আগেই ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’ সংক্রান্ত মামলা দায়েরসহ তড়িঘড়ি নানা তৎপরতায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও বিষয়টিতে রীতিমত অবাক বনেছেন। তারা বলেছেন, যেখানে পোস্টমর্টেম রিপোর্টেই প্রমানিত হবে যে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে নাকি হত্যার শিকার হয়েছে। তার আগেই আত্মহত্যার প্ররোচনা সংক্রান্ত মামলা রুজু করে কী বিশেষ কিছু ধামাচাপা দেয়ার পাঁয়তারা চালানো হয়েছে? এ প্রশ্নই উঠেছে ঝানু গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মুখেও। তাই সবাই এখন এটাও বলছেন নুসরাতকে কেন এখনও অফিসিয়ালি জেরা করা হচ্ছে না?