জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: ছাত্রলীগের কড়া সমালোচনা করে সংগঠনটি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্টের মাধ্যমে একটি কর্তৃত্ববাদী পরিবেশ কায়েম করার জন্য ছাত্রলীগ হামলা-নির্যাতনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। আর হলগুলোতে মিনি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প তৈরি করে রেখেছে তারা।’
রিজভী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজির কারণে তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদাবাজ লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করেছে। আমরা এই সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের প্রায় প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তাতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়েছে, তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতিও শেখেনি। একটি ভালো পারিবারিক মূল্যবোধেও বেড়ে উঠেছে বলে মনে হয় না। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতাসীন সরকার যেভাবে ছাত্রদের প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তুলছে এটি কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের অনুসারী এই সংগঠনটির চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, হত্যা, দখলের খবর বের হচ্ছে। তারা সন্ত্রাস করে আসছে। তাদের আচরণ প্রমাণ করে ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতার বদলে অস্ত্র-বন্দুক চাপাতি তুলে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি সফল কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদল নতুন উদ্যোমে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে- যা ছাত্রলীগ সহ্য করতে পারছে না। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল। যখন ছাত্রদল সারাদেশের কাউন্সিরদের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছে, তখন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ৮৬ কোটি টাকার চাঁদাবাজির খবর সারাদেশকে চমকে দিয়েছে। একদিকে ছাত্রদলের গণতন্ত্রচর্চার প্রশংসা আর অন্যদিকে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে দেশবাসীর কাছে যেভাবে হেয় হয়েছে সেটিকে ঢাকার জন্যই এখন তারা সন্ত্রাসীর পথ অবলম্বন করছে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ছাত্রদলকে তারা সহ্য করতে পারছে না।’
রিজভী বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি গঠন, শোকজ নোটিশ ছাড়া তাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বাদ দেয়া আবার দুইজনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব প্রদান সবকিছু অবৈধ। অথচ আদালত এসব নিয়ে নিশ্চুপ। আদালত যদি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হতো তাহলে আরপিও ভঙ্গ এবং দস্যুবৃত্তিক কর্মকাণ্ড আমলে নিয়ে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্তি করে দিত। মিডনাইট ভোট ডাকাতি করার পর অবৈধ নির্বাচন ও ভুয়া সরকারকে বাতিল ঘোষণা করত। শোভন-রাব্বানীর ৮৬ কোটি টাকার চাঁদাবাজির ঘটনায় ব্যবস্থা নিত। ৬০ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে আদেশ দিত। ব্যাংকডাকাত, শেয়ারবাজার লুটেরাগণ আদালতের নজরে আসত। বাংলাদেশকে ফোকলা করে এই সরকারের যারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। কিন্তু তা না করে আদালত পড়ে আছে বিএনপিকে নিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল নিজেরা এখন পর্যন্ত যা কিছু করেছে, তার সবই আইনসম্মত। ছাত্রদল একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব নির্ধারণ করেছে। কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত এই কমিটি। আইনের বিধানে, রাজনৈতিক দল বা তাদের কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় আদালতের এখতিয়ারে পড়ে না, এমন একাধিকবার উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বিদেশে টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে। আর জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে লোক দেখানো অভিযান চালাচ্ছে সরকার। গত দুইদিনে অবৈধ অর্থ, দুর্নীতি-মাদক-জুয়া-ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ফিকে হয়ে সরকারের আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে।’
ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডে আদালতের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রিজভী বলেন, আমরা এ বিষয়ে এখনও অফিসিয়ালি কিছু পাইনি।’